উইকেটকিপার মুশফিকের পক্ষ নিলেন মাশরাফি

উইকেটকিপার মুশফিকের পক্ষ নিলেন মাশরাফি

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উইকেটের পিছনের দায়িত্ব সামলে থাকেন মুশফিকুর রহিম। কিন্ত অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে তিনি দলে না থাকায় উইকেটের পিছনে ছিলেন কাজী নুরুল হাসান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম দলে ফিরেছেন৷ মুশফিকুর রহিম দলে ফেরায় উইকেটের পেছনে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে চলছিল জল্পনা কল্পনা। অনুশীলন দেখেও পাওয়া যাচ্ছিল না উত্তর!

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কে থাকছেন উইকেটের পিছনে এই উত্তর দিয়েছেন টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো৷ দীর্ঘদিন পরে জাতীয় দলে ফিরেই জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। সেটির প্রতিদান পাচ্ছেন আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া নিউজিল্যান্ড সিরিজেও। দেশ সেরা উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস দলে থাকা সত্ত্বেও প্রথম দুই ম্যাচে তিনিই পাচ্ছেন উইকেটের পেছনে গ্লাভস সামলানোর দায়িত্ব। পরের দুই ম্যাচ উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে নামবেন মুশফিকুর রহিম। এরপর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দেওয়া হবে এই দায়িত্ব।

বিষয়টা অনেক ক্রিকেট ভক্ত ও বিশ্লেষকদের মনোপুত হয়নি। অনেকের মতে এটা মুশফিকের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। এবার মুশফিকের পক্ষ নিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সোমবার রাতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুই ম্যাচ, দুই ম্যাচ করে কিপিং করার বিষয়টির চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন বিভিন্ন বিষয়।

মাশরাফি লিখেন, ‘১৬টা বছর যে মানুষটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে তাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে আপনি যতো বড় ক্ষমতাধর মানুষ হোন না কেন একটু জায়গা বুঝে বলা উচিত। মুশফিক কিভাবে জাতীয় দলে এসেছে তা সবাই জানে সিম্পিলি তার ব্যাটিং দক্ষতা। একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু কিপার হিসাবেই খেলা যেত তার উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু গিলক্রিস্ট আসার পর সব হিসাব পাল্টে যায়। যার সুত্র ধরে ইন্ডিয়া টিমে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড়কেও কিপিং করতে। যাতে দল সুবিধা মতো এক্সট্রা একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে পারে। অবশ্যই সেটা লিমিটেড ক্রিকেটে।’ ‘বিশ্ব ক্রিকেটের দুজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটারকে সেটা আবার নিজ দলের খেলোয়াড়কে, আপনি যুদ্ধ করে বাঁচতে বলবেন সেটা ড্রেসিং রুম পর্যন্ত থাকাই ভালো। অবশ্যই দলের স্বার্থ সবার আগে। দলের আগে কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। কিন্তু যে ক্রিকেটারগুলো দেশের হয়ে খেলতে নামে তারা কোন সহানুভূতি নিয়ে নয় বরং তার শরীরের সর্বচ্চটুকু নিংড়ে দলে জায়গা পায়। আর মুশফিকের সে গল্প আমরা সবাই জানি, তার নিবেদন কি পর্যায়ে। বাংলাদেশের হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল সে।’

তিন কিপার মুশফিক, সোহান ও লিটনকে নিয়ে তিনি লিখেন, ‘সোহান সম্ভবত দলের সেরা কিপার। সাথে লিটন। এক সিরিজ গ্যাপে যোগ হলো মুশফিক। এক দলে এতো কিপার এ তো আনন্দের, তা না হয়ে বের হয় বিষাদ। এতোটুকু সামাল দিতে না পারলে তো সমস্যা। যা এক পর্যায়ে দলের ভিতর অদৃশ্য এক বাজে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত তারা তাদের মতো করে নিবে, এটাইতো স্বাভাবিক এবং অবশ্যই ভালোর জন্য নিবে। সফল হলে তালি না হলে গালি, যা সারা বিশ্বেই হচ্ছে। কে খেলবে, কোন পজিশনে খেলবে, কার রোল কি এগুলো তো দলের একান্ত পরিকল্পনা যা ড্রেসিং রুমে শুরু আবার ড্রেসিং রুমেই শেষ হয়। বাহিরে বলতে গেলে তো খেলোয়াড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা তার স্বাভাবিকতাকে বাঁধাগ্রস্ত করবে।

আমি শুধু ভাবছি এতে কি সোহানের জন্যও খুব ভালো হলো যে ছেলেটা দুই ম্যাচে সব দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে, তাহলে বিগত দুই সিরিজ সে যা করলো তার কি হবে? আর লিটন কি বলবে? এখন ও তো কিপিং ভুলেই যাবে। আর মুশফিক কে পারফর্ম করতে হবে ১৬ বছর খেলার পর! এটা বলে দেওয়ার কিছু নাই সে খুব ভালো করেই জানে বরং বাহিরে এভাবে বললে তার নিবেদনকে অসম্মানিত করা হয়। যা তার প্রাপ্য না। সে সেরা ব্যাটসম্যান বলেই ১৬ বছর দেশকে সার্ভিস দিছে। আবার দলের প্রয়োজনে তাকেই কিপিং করতে হতে পারে। তখন যদি সে না বলে সেটা কি ভালো শোনাবে? দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে। তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়।’

স্ট্যাটাসের একেবারে শেষে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি লিখেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন আউটসাইডার হিসাবেই কথাগুলো লিখলাম কেউ পার্সোনালি না নিলে খুশি হবো। গুড লাক বাংলাদেশ। ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password