গতরাতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের কেউ হারেনি, হেরেছে ফুটবল

গতরাতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের কেউ হারেনি, হেরেছে ফুটবল
MostPlay

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন পুরো বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ম্যাচ মানেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তর্ক বিতর্ক, জমজমাট কিছু মুহুর্ত। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালের পর আবারও কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ১টায় মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। বহুল কাঙ্খিত ম্যাচটি যথারীতি মাঠে গড়ালো কিন্ত ম্যাচ মাঠে গড়ানোর ৫ মিনিটের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। সাইডলাইনে চলে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা। একটা সময় আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা মাঠে ছেড়ে উঠে যান। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি মাঝপথে বাতিল হয়ে যায়। কেন?

খেলা বন্ধ হওয়ার কারণ হলো খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হঠাৎ মনে পড়ল যে আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় কোয়ারেন্টিনবিধি না মেনে খেলতে নেমেছেন! করোনার এই সময়ে ব্রাজিলের লাল তালিকাভুক্ত দেশের তালিকায় রয়েছে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে কেউ ব্রাজিলে আসলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করতে হয়। সে দেশের প্রিমিয়ার লিগে খেলে এসেছেন আর্জেন্টিনার চার ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জিওভানি লো সেলসো ও এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া। এর মধ্যে ব্রাজিলের বিপক্ষের ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন মার্টিনেজ, রোমেরো ও লো সেলসো। বদলি খেলোয়াড়ের তালিকায় ছিলেন বুয়েন্দিয়া। অথচ ওই চার খেলোয়াড় ব্রাজিলে ম্যাচটির তিন দিন আগেই অবস্থান করছিলেন। হোটেলে থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত অনুশীলনও করছিলেন তারা। কিন্তু এই তিন দিন ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান এজেন্সির কর্মকর্তারা কোনো আপত্তি জানাননি যে আর্জেন্টিনার ওই চার খেলোয়াড় খেলতে পারবেন না। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, ইংল্যান্ড থেকে আসা আর্জেন্টিনার চারজন খেলোয়াড় করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করেছেন।

এই ঘটনাকে ঘিরে মাঠের মধ্যে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর মাঠ ছেড়ে টানেলে ঢুকে যান আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরার পর তারা কথা বলেন মেসি ও নেইমারের সঙ্গে। সেখানে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় রেফারি কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দেয়।

আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসিও আনভিসার কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘আমরা এখানে আছি তিন দিন হলো। তাহলে আপনার এ ব্যবস্থা এখন কেন নিচ্ছেন?’ ম্যাচের মাঝপথে খেলা বন্ধ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ স্কোলানি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্ক্যালোনি বলেছেন, ‘এই চার ফুটবলারকে কেন হোটেল থেকে তুলে নেওয়া হলো না। একবারও আমাদের জানানো হয়নি যে তারা ম্যাচটি খেলতে পারবে না। আমরা ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিলাম, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররাও। ম্যাচটি শেষ হলে পুরো বিশ্বের ফুটবল ভক্তরাই খুশি হতো, উল্লেখ করে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, 'বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের খেলা উপভোগ করতে পারলে এটা দারুণ হতো। আমি চাইব আর্জেন্টিনার মানুষ যেন বুঝতে পারে যে, একজন কোচ হিসেবে আমাকে আমার খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে হবে।'

কনমেবলের শৃঙ্খলাবিধির সেই ধারা অনুযায়ী, সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা। খেলা পণ্ড হওয়ায় কনমেবলের (লাতিন আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা) নিয়ম ব্রাজিল নিজেদের পক্ষে পাচ্ছে না। কনমেবলের শৃঙ্খলাবিধির ৭৪নং ধারায় উল্লেখ আছে, ম্যাচ শুরু হয়ে গেলে খেলা থামিয়ে খেলোয়াড়দের ম্যাচ খেলায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না। খেলতে বাধা দেওয়া যাবে না। খেলোয়াড় সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে সেটা মেটাতে হবে ম্যাচ শুরুর আগে বা পরে, ম্যাচ চলাকালীন সময়ে অবশ্যই নয়। যদি এমনটি হয়, তাহলে যে দলের কারণে ম্যাচ থেমে যাবে, সে দল ৩ পয়েন্ট হারাবে। প্রতিপক্ষ দল পাবে সেই ৩ পয়েন্ট। যদিও এই পয়েন্টের ব্যাপারে কনমেবল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

শেষ পর্যন্ত হয়তো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের এই খেলাটি আবার মাঠে গড়াবে অথবা আর্জেন্টিনাকে ৩ পয়েন্ট দিয়ে দেবা হবে। স্থগিত হয়ে যাওয়া খেলাটির কোন একটা সমাধান হবে কিন্ত গতকাল রাতে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের কেউ হারেনি বরং হেরেছে ফুটবল। এমন ঘটনা ফুটবলে এর আগে কখনও ঘটেনি। যেখানে দুই দলের খেলোয়াড়রা খেলতে প্রস্তত, খেলাও শুরু হল এবং তারপর সেদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসে খেলা বন্ধ করে দিল।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password