ফরিদপুরে ছেলে পালিয়ে বিয়ে করায় শিক্ষক বাবাকে কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ

ফরিদপুরে ছেলে পালিয়ে বিয়ে করায় শিক্ষক বাবাকে কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ

ফরিদপুরের মধুখালীর কোড়কদি ইউনিয়নের ছেলের পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় শিক্ষক বাবাকে কান ধরানোর অভিযোগ উঠেছে থানার ওসির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মধুখালী থানার ওসি আমিনুল ইসলামকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরের দিকে তার এ বদলি কার্যকরের পর তিনি ঢাকার উদ্দেশে এলাকা ত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর মধুখালী থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন আমিনুল ইসলাম। তিনি মধুখালী থানার আবাসিক বাসায় একাই বসবাস করতেন।

মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক চম্পক বড়ুয়া জানান, সকালে ঢাকা পুলিশ রেঞ্জে সংযুক্ত হওয়ার আদেশ পাওয়ার পরপরই দুপুরের দিকে থানা ত্যাগ করেন ওসি আমিনুল।

তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি (ওসি) বলেন, মেয়েপক্ষের লোক অবস্থাসম্পন্ন আর ছেলেপক্ষ গরিব এটা সত্য। তারা দু’পক্ষই আসছিল। এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ছেলের বাবা মাস্টার সাহেব বলেন আমাকে দুইদিন সময় দিন, এর মধ্যে হাজির করব। এরপর থেকে তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলে বেড়ান। কান ধরে উঠবস করাসহ কোনোটাই সত্য না।

এলাকাবাসী, পরিবার ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ ফরিদপুর জেলার মধুখালীর বাগাট গ্রামের বাসিন্দা রাজকুমার মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী সুকুমার ঘোষের মেয়ে সেতু ঘোষ পালিয়ে বিয়ে করেন একই উপজেলার কোড়কদী ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সুশান্ত কুমার বিশ্বাসের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাসকে।

ছেলে পালিয়ে বিয়ে করায় মধুখালী থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে স্কুলশিক্ষক বাবাকে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন তিনি। বিয়ে মেনে নিতে না পারাসহ কনের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগও ওঠে। এমন ধরনের অভিযোগ তুলে নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকার একটি থানায় জিডি করেন ভুক্তভোগী নবদম্পতি এবং সংবাদ সম্মেলনও করেন।

এই নবদম্পতির অভিযোগ, বিয়ে মেনে নিতে পারেনি বিত্তশালী সেতুর পরিবার। বিয়ের পর থেকেই সজীবের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেন মেয়ের পরিবার।

হয়রানি থেকে বাঁচতে গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী সেতু বিশ্বাস ও সজিব বিশ্বাস। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মধুখালীসহ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সেতু বিশ্বাস জানান, তিনি সাবালিকা। নিজের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। সজিবের পরিবার বিত্তশালী না হওয়ায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি তার শ্বশুরকে থানায় ডেকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ওসি কান ধরে উঠবস করিয়েছেন।

সজীব বিশ্বাস বলেন, থানায় উপস্থিত সকলের সামনে বাবাকে কান ধরে উঠবস করান থানার ওসি। এ সময় শারীরিক নির্যাতনও করেন ওসি।

সজীবের বাবা সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, থানায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে শার্টের কলার ধরে ওসির কক্ষে নিয়ে যায়। ওসির রুমে সেসময় বসা ছিলেন মেয়ের কাকা ও তার সহযোগীরা। তখন তিনি সকলের সামনে নানা অপমানজনক কথা বলার পাশাপাশি কান ধরে উঠবস করান ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পরিষদের সদস্য বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু দেব প্রসাদ রায় দেবু জানান, গত ৩ মার্চ সেতু নিখোঁজের পরদিন ৪ মার্চ সেতুর বাবা সুকুমার ঘোষ অজ্ঞাত নাম উল্লেখ করে থানায় একটি জিডি করেন। এরপর থানায় মেয়েপক্ষ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে ছেলের বাবা সুশান্ত বিশ্বাস সকলের সামনে দুইদিনের সময় নেন। এর বেশি কিছু নয়। কান ধরে উঠবস করানোর বিষয়টি একেবারে বানোয়াট।

ঘটনার সময় থানায় দু’পক্ষের সঙ্গে উপস্থিত থাকা বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান জানান, কান ধরে উঠবস ও লাঠি দিয়ে আঘাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, জনস্বার্থে ওসি আমিনুলকে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে তাৎক্ষণিকভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তার (ওসি) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password