বাসানটেক বস্তিতেই দিন পার করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সাত্তার

বাসানটেক বস্তিতেই দিন পার করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সাত্তার
MostPlay

যেকোন কেহ দেশের কথা চিন্তা করলে  হয়তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা সবার আগে মনে আসবে। কিন্তু আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে করি তাহলে সবার আগে মনে আসবে সেসকল মানুষেরদের কথা যারা পরিবার পরিজন ছেড়ে নিজের জীবন বাজি রেখে এই দেশকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পরেছিল, সেকল মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। কিন্তু যারা দেশের জন্য এত ত্যাগ তিতীক্ষা করেছিল, যারা দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিল। যাদের জন্য বাংলাদেশ নামক একটা দেশ পেয়েছি, পেয়েছি বিশ্বের বুকে একটা মানচিত্র। তাদের সকলের কথা কি আমরা মনে রেখেছি? সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কি আমরা তাদের সঠিক মর্যাদা দিতে পেরেছি? এর উত্তর কে দিবে?  

এখনো কেন অবহেলিত থাকবে সেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধারা? তারা তো থাকবে দেশের সম্মানের চূড়ায়। সম্মান তো দূরের কথা এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধার নেই কোন ভিটামাটি। দেশে নামধারী কিংবা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা পেয়ে যাচ্ছে নানা সরকারি সুযোগ সুবিধা কিন্তু আসল মুক্তিযোদ্ধারা পাচ্ছেনা তাদের নির্দিষ্ট সম্মাননা।  

আজ  আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা জিনি দেশ বাঁচাতে মাত্র ২০ বছর বয়সে জাঁপিয়ে পরেছিল যুদ্ধ করতে। যে ১,৮৬,৫৭০ বর্গমাইলের একটি দেশ রক্ষায় অংশ গ্রহন করেছিল সেই ব্যক্তির নিজের নাই ১ মিটার জায়গায়া ও। দেশের একজন গর্ভিত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বাস করেন বাসানটেক বিআরপি বস্তিতে। এমনকি নিজের সন্তানদের অসচ্ছল চলাফেরার কারণে দু-বেলা খেতেও তার হয়ে যায় কষ্ট। নানান যায়গায় নানান ভাবে সহায়তা চেয়েও সে পায়নি কোন আবাসন সহায়তা।

গর্ভিত এই মুক্তিযোদ্ধা কিশোরগঞ্জ জেলার, করিমগঞ্জ উপজেলার, চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। তার মাতার নাম মৃত মোসাঃ খোরসেদা বেগম। তৎকালিন রাজাকারদের কারণে সে তার নিজের বিটা মাঠিতেও কিছু করতে পারেনি। যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন বলে একদল রাজাকার তখনকার সময় তার ঘর বাড়িয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল।

আব্দুর সাত্তার বিডিটাইপকে বলেন, আমি আমি একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে আমার অবদান দেখে বলা হয়েছিল বীর বিক্রম খেতাব দেওয়া হবে। কিন্তু তা দেওয়া আর হয়নি আমাকে। আমি কখনো  ভাবিনি দেশ আমাকে এমন উপহার দিবে। দেশের যখন ভয়াবহ অবস্থা আমি আমি আর্মিতে যোগদান করছি ১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১১ তারিখ ভারতে ৩ নম্বর সেক্টোরে সেকেন্ড বেঙ্গল।  আমার এই সুঠামদেহ ও তরুনত্তের কারণে আমি অতি তাড়াতাড়ি সব ধরণের অস্র চালানো ও পাক হানাদার বাহিনীদের কিভাবে কৌশলে গায়েল করতে হবে তা শিখে ফেলি। অল্প কিছু দিনের মাথায় যোদ্ধে যোগদান করি। আমি যুদ্ধোকালীন(অবঃ) মেজর জেনারেল আব্দুল মতিন সাহেব সাথে ছিলাম।

বিডিটাইপকে নিজের কথা বলতে গিয়ে একটা সময় কেঁদে ফেলেন আব্দুর সাত্তার,আবেকপ্লুত হয়ে আব্দুর সাত্তার বলেন, আমি যোদ্ধ করেছি, যোদ্ধের সকল সার্টিফিকেট আছে, আমার কাছে প্রমানও ও রয়েছে বেশ আপনারা কিংবা সরকার চাইলে আমি সব প্রমান দিতে পারি। এমন কি আমি মেজর জেঃ সুবিদ আলী ভূঁইয়া সাহেবের সাথেও ছিলাম। আমি তো দেশ রক্ষার্তে নিজের জীবন বাবা মা কারো কথা ভাবিনি,এত কম বয়সে চলে গেছি যুদ্ধ করতে। তাহলে দেশ কেন আমায় শুধু আবাসন ব্যবস্থা করে দিতে এত কার্পোনতা করছে? আমার কি একটু সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার নেই?

তিনি আরও বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি মনে করেন এই দেশ রক্ষার্তে আমাদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান রয়েছে, যদি আমরা যুদ্ধ করে এই দেশকে জয় করার ফলে একটু সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হই তাহলে দয়া করে আমায় একটা আবাসন ব্যবস্থা করে দেন অন্তত নিজের লাস্ট জীবনটা সোনার বাংলাদেশে আনন্দের সহিত মরতে পারি। আজ  যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতো তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের এমন দিন দেখতে হতোনা।

মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার বিডিটাইপকে আরও বলেন,দেড় বৎসর আগে সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমার বাড়িতে গিয়েছিল অর্থ সম্পদ আছে কি না তা জানার জন্য। কিন্তু তাহারা জানিতে পারিল আমার ভিটা বাড়ি কিছুই নাই। স্থাবর-অস্থাবর অর্থ আমি রক্ষা করিতে পারি নাই। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সনের দেশের পডুকুল পরিস্থিতির কারনে আমি আমার অর্থ রক্ষা করতে পারি নাই। যেখানে সেনা বাহিনীরা আমার বিষয়ে এত তদারকি করলো এবং জানতে পারলো আমার স্থাবর-অস্থাবর ও অর্থ সম্পদ কিছুই নাই তার পরও কেন আমার জন্য কিছু করা হলোনা?

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সবার জানা আছে রাজাকারদের বংশধরদের ভয়ে আমার থানাতে কোন কাজ কর্ম আমি করিতে পারিনা। ৯০ সাল থেকে আমার সন্তানাদি নিয়ে ঢাকা বস্তিতে আমাদ দিন কাটাচ্ছি বিশেষ সন্মানীয় ভাতা চালু করাতে কোনোমতে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। কিন্তু আবাসনের কোন সুব্যবস্থা না থাকায় আজও  ছিন্নমুল হিসাবে বসবাস করছি।

উল্লেখ্য,  আব্দুর সাত্তার মিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার সেনা প্রফেশনাল সার্টিফিকেট খন্ড নম্বর-৭ গেজেট নং- ১৫৫৩, ভারত তালিকা- ১২৪৫৮, প্রাইম মিনিষ্টারের সার্টিফিকেট- ২৭২০২, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় সাং- ৫০০২৯ তারিখঃ ১১/১২/১৪১০ বাংলা, ২৫/০৩/২০০৪ইং, মুক্তি ভাতা ০১১৭০২০১৬৬ তারিখঃ ২০১০-০৪-১২।  

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password