প্রেম ও বিয়ে অস্বীকার,ঢাকাইয়া নারীর ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চট্টগ্রামের প্রবাসী উধাও

প্রেম ও বিয়ে অস্বীকার,ঢাকাইয়া নারীর ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চট্টগ্রামের প্রবাসী উধাও

ক্রাইম প্রতিবেদক: তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক। তারও কিছুদিন পর বিয়ে করে সংসারপাতে। এক ওমান প্রবাসীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিভিন্ন কৌশলে তিনি ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওমান থেকে দেশে আসে চট্টগ্রাম মীরসরাই উপজেলার প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়া (৩৬)। মাসখানিক পরেই ঢাকাইয়া নারী রোকসানা (২৮) কে নোটারী হলফনামায় ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন। পরে হলফনামামূলে কাবিননামা সম্পন্ন করে ঢাকা কেরানিগঞ্জ তেঘরিয়া কাজী অফিসে।

রোকসানার দাবি, বেশ কিছুদিন তাঁরা একত্রে সংসার করেন। রোকসানাকে স্বামীর গ্রামের বাড়ি মীরসরাইতেও ঘুরাতে নেন। সম্পর্কের এই আসা যাওয়াতে গভীর ভালোবাসায় পাগল ছিলো এক সন্তানের জননী রোকসানা।

এভাবে কিছুকাল যাওয়ার পর। ছুটি শেষে ইউনুস ওমানে চলে যান। বিদেশে গিয়েও দুজনের যোগাযোগ চলে স্যোশাল মিডিয়া ও মুঠোফোনে। এরমধ্যে কিছুদিন যেতেই প্রবাসী ওমানে দোকান ও গ্রামের বাড়ি পাকা নির্মাণ করার কথা জানিয়ে টাকা ধার চান। সরল বিশ্বাসে রোকসানাও টাকা দিয়ে দেন।

একেক সময় একেক বাহনা। বিভিন্ন সময়ে ইউনুস বিদেশ থেকে তার ভাইবোন ও ভগ্নিপতিসহ অপরিচিত লোকদের ব্যাংক হিসাব নম্বর দিতেন। সেসব ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করতেন রোকসানা। এভাবে দেশের বিভিন্ন শাখা ও একাধিক বিকাশ নাম্বারে সর্বমোট ১২ লক্ষ টাকা প্রদান করেন ঢাকাইয়া নারী রোকসানা।

ভালোবাসার মোহে তখন অন্ধ ছিল প্রায়। ব্যবসা সেট করে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনও দেখান প্রবাসী। এক পর্যায়ে আরো ৫ লাখ টাকা ধার চান। কিন্তু এখন রোকসানা অপারগ। ওর কাছে তখন আর নগদ টাকা ছিলোনা দেওয়ার মতো। এতে বিগড়ে যায় প্রবাসী ইউনুস। সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্লক করে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

এসময় নিরুপায় হলেও রোকসানা ৫/৬মাস অপেক্ষা করেন। কিন্তু যখন দেখলেন ইউনুস কিছুতেই আর যোগাযোগ করছেন না। তখন রোকসানা স্বামীর খবর নিতে হাজির হয় ইউনুসের গ্রামের বাড়ি। মীরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া গ্রামে। তাদের দুজনের ছবি, নোটারী হলফনামা ও কাবিননামা দেখিয়ে ইউনুসের খবর জানতে চান। অথচ এরআগে রোকসানা একই বাড়িতে বহুদিন ছিলো। ঘটনাচক্রে সবকিছু অস্বীকার করে বসে ইউনুসের পরিবারও।

তখন খুব বিপদে পড়ে ঢাকাইয়া নারী রোকসানা। উপায়ন্তর না দেখে গ্রামের জনপ্রতিনিধিদের কাছে সালিশ ডাকেন। কিন্তু ইউনুস সবাইকে ফোনে বলে দেয়, রোকসানার সাথে তার কোন বিয়ে হয়নি। তাহলে কী রোকসানা প্রতারণার শিকার! ইউনুসের পরিবার উল্টো হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

সরল বিশ্বাসে প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রবাসী ইউনুসের কাছে সব কিছু সপে দিয়েও রোকসানা এখন সর্বশান্ত। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। জানা যায়, ইউনুস ওমানের সাইহুদ হাইপার মার্কেটে সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত।

ঘটনাচক্রে আরো জানা যায়, গত ৬ আগষ্ট ইউনুসের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে মীরসরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ভূক্তভোগি নারী। যার জিডি নং-৪১৭। জিডিতে ইউনুসের পরিবারের সদস্য রবিউল ইসলাম রবি (৩৬), আব্দুল করিম (৪১), আবুল কালাম (৬৫), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), রুমা আক্তার রুমু (৩৫), মনি আক্তার (৩৫) এর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের অভিযোগ করা হয়।

মীরসরাই থানার (জিডি) তদন্ত কর্মকর্তা পরে ঘটনার সত্যতা জানিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে উল্লেখ করেন, ভালো সম্পর্ক তৈরি করার সুবাদে রোকসানার কাছ থেকে অভিযুক্তরা বাড়ি নির্মাণের কথা বলে বিভিন্ন ধাপে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন। পরিবর্তীতে তা ফেরত চাইলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।

আরো জানা যায়, ভূক্তভোগী নারী বাদি হয়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় আরেকটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৮৩৬/২০ইং।
মামলায় আসামি করা হয়- মীরসরাই উপজেলার উত্তর কচুয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়া (৩৬) ও তার আপন বড়ভাই আব্দুল করিম (৪১) ও বোন জামাই মো. জসিম উদ্দিন (৪৫) কে।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী রোকসানা আক্তার কান্না ভেঁজাকণ্ঠে বলেন, 'ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে আমি হয়তো বোকা বনে গিয়েছিলাম। তার পরিবারকে বাড়ি নির্মাণে টাকা পয়সা ধার দিয়েছি। সব প্রমাণ রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, মানুষকে বিশ্বাস করা পাপ। যদি জানতাম সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার টাকা পয়সা হাতিয়ে নিবে। তাহলে কোনোদিন এ পথে পা বাড়াতাম না। তিনি আরো জানান, এখনো প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে ইউনুস বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।'

জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল গণি বলেন, ঘটনাটি সত্য ইউনুস এবং ওর পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে ঐ নারীর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান ও নেতাদের কাছে সালিশ বসেছে কিন্তু সমাধান হয়নি। কারণ অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ঐ ইউনুস এখনো ওমানে রয়েছেন।'

এলাকার ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা অবগত। এবিষয়ে সালিশী বৈঠকও হয়েছিল। বৈঠকে ইউনুসের বাবা আবুল কালাম, ভাই করিম ও তার দুবোন এসেছিলো। মহিলার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছিল। কিন্তু ইউনুস বিদেশে থাকায় তারা সমস্যা সমাধানে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না বলে আমাদের জানায়।'

বিষয়টি জানতে প্রবাসী ইউনুসের নাম্বারে একাধিকবার মেসেজ ও হোয়াটস আপে কথা বলতে চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার আপন ভাই আব্দুল করিম (৪১) বলেন, আমার ছোট ভাই প্রবাসী ইউনুস দেশে আসলে বিষয়টির সুরাহা হবে। এর আগে আমরা যা বলার সংবাদ সম্মেলন বলেছি।'

রোকসানার আইনজীবি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আদালতে মামলা চলমান। পরবর্তীতে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন আসলে তখন হয়তো কিছু বলা যাবে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার পিবিআই পুলিশের এসআই মো. মঈনুল বিশ্বাস বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। বিষয়টি জটিল বলে মনে হচ্ছে। তাই মামলার স্বার্থে এখন কোন মন্তব্য করতে পারছি না।'

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password