বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা নিশ্চয় এই ম্যাচটাকে ভুলে যেতে চাইবেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা নিশ্চয় এই ম্যাচটাকে ভুলে যেতে চাইবেন

বাংলাদেশ ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট নিয়ে অনেক আবেগপ্রবন। আমরা আমাদের ক্রিকেট দলের জয়ে যেমন অনেক আনন্দ করি আবার হেরে গেলে অনেক কষ্ট পাই। আমাদের দেশের ক্রিকেট নিয়ে আমরা যেন একটু বেশি সিরিয়াস। ১৯৮৬ সালে পথ চলা শুরু করে আমাদের দেশের ক্রিকেট। অনেক সাফল্য ব্যার্থ্যতায় মোড়ানো আমাদের ক্রিকেট। ৩৪ বছরের পথচলায় ক্রিকেট আমাদের অনেক উৎসবের উপলক্ষ করে দিয়েছে আবার কিছু পরাজয় আমাদের অনেক ব্যাথিত করেছে। এমন কিছু পরাজয় নিয়ে বিডি টাইপের ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথম পর্ব আজ। লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ শিহাব।

আজ এমন একটি পরাজয় নিয়ে আলোচনা করবো যা মনে হয় ক্রিকেট জাতি হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিত লাভ করার পর সবচেয়ে কষ্টের প্রথম পরাজয়। বলছি ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে পরাজয়ের কথা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ যখন টেষ্ট স্ট্যাটাস পেল এর পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন সাফল্যই যেন পাচ্ছিল না। জিততেই ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পুরোটাই ব্যার্থতায় মোরানো ছিল শুরুর দিনগুলো। একের পর এক ম্যাচ হেরে যাচ্ছিল বাংলাদেশ টাইগাররা।

এমত অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দক্ষিন আফ্রিকায় ২০০৩ বিশ্বকাপ খেলতে যায়। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল আইসিসির সহযোগি দেশ কানাডা। সেদিন ছিল আমাদের দেশে ঈদের আগের দিন। সবাই অধীর অপেক্ষা নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসেছিল প্রায় ৪ বছর পর বাংলাদেশের জয় দেখার জন্য। সবাই আশায় বুক বেধেছিল দীর্ঘ প্রতিক্ষার বুঝি অবসান হচ্ছে। আজ বুঝি আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জয় পেতে যাচ্ছি। ঈদের আনন্দ দ্বিগুন করার আশায় যেন টিভি সেটের সামনে বসেছিল ক্রিকেট প্রেমীরা।

দক্ষিন আফ্রিকার ডারবানে ২০০৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী বিশ্বকাপের ৫ম এবং প্রথম রাউন্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কানাডা টস জিতে ব্যাট করতে নামে। বোলিং করতে নেমে শুরুটা চমৎকার করে বাংলাদেশের বোলাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিতে থাকে টাইগাররা। বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তদের মনে আশার আলো আরও বাড়তে থাকে। আজ বুঝি জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে টাইগাররা। নির্ধারীত ৫০ ওভারের ৫ বল বাকী থাকতেই অলআউট হয়ে যায় কানাডা। তারা স্কোর বোর্ডে যোগ করে ১৮০ রান।। কানাডার পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ৪২ রান করেন বিলক্লিফ। বাংলাদেশের পক্ষে ২৬ রানে ২ উইকেট নেন সানোয়ার হোসেন এবং ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন তরুন পেস তুর্কি মাশরাফি।

১৮১ রানের টার্গেটে ব্যাটং করতে নেমে বেশি সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ ৩৩ রানে তাদের প্রথম উইকেট হারায়। তারপর ছোট ছোট জুটি গড়ে এগুতে থাকে বাংলাদেশ। ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১০২ রান। এরপর যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মুড়ির মতো উইকেট পরতে থাকে বাংলাদেশের। সব ব্যাটসম্যানরাই যেন উইকেট বিলিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন। ১০৪ রানে ৪ উইকেট থেকে ১২০ রানে অলআউট তাও আবার মাত্র ২৮ ওভারে। হাতে রয়ে গেল ২২ ওভার বা ১৩২ বল।

সেদিন  বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আসলেই অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছিল। কোন ব্যাটসম্যানের ম্যাচ শেষ করে আসার মানসিকতা ছিল না। সেদিন বাংলাদেশের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ২৫ রান করেন হান্নান সরকার এবং সানোয়ার হসেন। সেদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এতটাই অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছিল যে কানাডার অধিনায়ককে তার ৫ নাম্বার বোলারকে ব্যাবহার করতে হয়নি। কানাডার ৪ বোলার মিলেই গুড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। কানাডার হয়ে কডরিংটোন মাত্র ২৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। তার বোলিং ফিগারটা ছিল এরকম ৯-৩-২৭-৫।

সেদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মন ভেঙে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের ঈদটাই যেন মাটি হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কানাডার মতো নবীন দলের কাছে এরকমভাবে আত্মসমর্পন মেনে নেয়া আসলেই অনেক কঠিন। কানাডার সাথে পরাজয়ের মতো ২০০৩ বিশ্বকাপটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য অনেক হতাশার। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস থেকে কখনও কানাডার সাথে ম্যাচটা মুছে ফেলা না গেলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা নিশ্চয় এই ম্যাচটাকে ভুলে যেতে চাইবেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password