পদত্যাগ করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমির মাওলানা আউয়াল

পদত্যাগ করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমির মাওলানা আউয়াল

বহিষ্কার হওয়ার আগেই পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল। আগামী সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। তবে হেফাজতে ইসলামের একজন কর্মী হিসেবে থাকবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমির।

সোমবার (২৯ মার্চ) শবে বরাতের রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করতে গিয়ে জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল এ ঘোষণা দেন।

হরতাল ইস্যুতে মহানগর নেতাদের অতি বাড়াবাড়ি ও পরদিন দোয়া মাহফিল ভিন্ন স্থানে করার অভিযোগ এনে আমিরের পদে থাকতে অনীহা আবদুল আউয়ালের। তবে অভিযোগ উঠেছে হরতালের সময় দায়িত্বে অবহেলা ও মনগড়া একক সিদ্ধান্তে বহিষ্কার হওয়ার আশঙ্কায় নিজেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন মাওলানা আউয়াল।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিককে জানান, মাওলানা আউয়াল হেফাজতের জেলার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও হরতাল চলাকালীন হরতাল সমর্থকদের মাঠে নামতে নিষেধ করেন। তিনি নিজের একক মনগড়া সিদ্ধান্তে কাজ করা এবং হরতাল শুরুতে লোকদের যার অবস্থানে চলে যেতে বলে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এতে ওনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে নালিশ করা হবে। তাকে যেন তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বহিষ্কার হওয়ার আশঙ্কায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির বলেন, ‘২৮ মার্চ হরতালের দিন সকালে মসজিদে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। তারা মসজিদের গেটের সামনে তিনটি কামান, সাঁজোয়া যান, পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মিছিল বের করতে চাইলে তারা অ্যাকশনে যাবেন। প্রয়োজনে গুলিবর্ষণ করা হবে। তখন আমি সবার জানমালের স্বার্থে মসজিদের গেটের বাইরে যেতে বারণ করি। কারণ আমাদের তো অস্ত্র নেই। কিন্তু মহানগরের অতি উৎসাহী নেতারা মিছিল করতে চেয়েছিল।

যদি সেদিন মিছিল করতে গিয়ে আমাদের ওপর গুলি ছোড়া হতো, কেউ লাশ হতো তখন তো এ আবদুল আউয়ালকে দোষারোপ করা হতো। মসজিদে গুলি ছুড়লে ঝাঝরা হয়ে যেত। এ কারণে আমাদের ওপর অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারা আজকে ডিআইটি মসজিদে বাদ আসর দোয়া না করে দেওভোগ মাদরাসায় করেছে। কারণ আমাকে তো বাদ দিয়েই দিছে। তাই আমি আর দল করব না। ভবিষ্যতে আর নেতৃত্ব দেব না। মসজিদ-মাদরাসা নিয়েই থাকব। আমার এখন বার্ধক্য বয়স। তাই আমি ভবিষ্যতে আর নেতৃত্বে থাকব না। সাধারণ মুসল্লিদের মতো থাকব। যারা নেতৃত্ব দেবে তাদের ডাকে আপনারা সারা দিয়েন।’

আগামী সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন মাওলানা আউয়াল।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মাদানীনগর, শিমরাইল উত্তপ্ত থাকলেও নারায়ণগঞ্জ শহর ছিল একেবারে শান্ত। ভোর থেকে শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে হেফাজত নেতারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা রেলওয়ে ডিআইটি মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন। ভোর থেকেই ডিআইটি মসজিদ পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখে।

সকাল ৭টার দিকে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা মসজিদের বারান্দা ও আঙিনার মধ্যে হরতালের পক্ষে স্লোগান দেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মসজিদে ঢুকে হেফাজতের জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মসজিদের ভেতরে কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নেন এবং বাকিরা বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password