কী ফিরে এলো?’ না বলে বরং এভাবে বলা ভালো যে ‘কী ফিরে এলো না?’ নিউজিল্যান্ড সফরে যে যে কারণে ভুগে আসছিল বাংলাদেশ দল, ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে এসেই তো জড়ো হলো সব!
যদিও এবার আগে বোলিং পাওয়ার পর প্রথম ১০-১২ ওভারকে আলাদা করে রাখতেই হয়। এই সময়েই যে ৫৭ রানে কিউইদের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে চড়ে বসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর ফিরে এলো ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের পরের অংশটিও। ক্যাচ পড়তে থাকল একের পর এক। রান আউটের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার মহড়াও চলতে থাকল। খেই হারাতে থাকলেন বোলাররাও। প্রতিপক্ষের এমন উদারতা দুই হাতে লুফে নিলেন ডেভন কনওয়ে ও ড্যারেল মিচেলও। দুজনেই দেখলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির মুখও। সুবাদে ৬ উইকেটে ৩১৮ রানের বিশাল সংগ্রহ তাড়ায় সফরকারীরা ফিরিয়ে আনল ডানেডিনের প্রথম ওয়ানডের মতো উইকেট ছুড়ে আসার মিছিল। তাই ওয়ানডে সিরিজের শেষে তামিম ইকবালের দলের যোগফল ব্যর্থতার ষোলোকলাই দেখাচ্ছে!
অথচ উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। আবার এমনও নয় যে প্রতিপক্ষের বোলাররা এমন আহামরি কোনো বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন। রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ শুরুটা দারুণ করলেও বোলিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাবও সময়ে প্রকট হয়ে উঠল। সব মিলিয়েই বড় হারে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ। দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন শুধু তিনজন ব্যাটসম্যান।
তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম মাহমুদ উল্লাহ। ৭৩ বলে ৭৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেললেও সেটি শেষ বিচারে হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে শুধু। কারণ তিনি উইকেটে যাওয়ার সময় দল ৪৮ রানে হারিয়ে বসেছে ৪ উইকেট। সেখানে ৮২ রানে যেতে যেতে নেই ৭ উইকেট। ওই অবস্থা থেকে ১৫৪ রানে ইনিংস শেষ হয়ে ১৬৪ রানের বিশাল হার, যা নিউজিল্যান্ডের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের দিক থেকে দ্বিতীয়। এভাবে বিধ্বস্ত হয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকা আত্মবিশ্বাস নিয়েই এখন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের অপেক্ষা।
প্রথম ওয়ানডের শিক্ষায় ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ১০ ওভারে উইকেট ধরে রাখায় জোর দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে আবার ফিরে যাওয়া ডানেডিনেই। ৭ ওভারের মধ্যেই ২৬ রানে তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সাজঘরের পথ ধরায় ফিরে আসে সেই দুঃস্বপ্ন। খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে তামিম (১) পেসার ম্যাট হেনরিকে ছন্দটা ধরিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর এর সঙ্গে তাল মেলান সৌম্য সরকার (১) এবং লিটন কুমার দাসও (২১)। দুজনেই পুল করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন।
প্রথমে সৌম্য, এরপর টাইমিংয়ের গড়বড়ে থার্ডম্যানে যাওয়া ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় এক হাতে জমান ট্রেন্ট বোল্ট। বিপর্যয় থেকে দলকে তুলে আনার চেষ্টায় সুবিধা করতে পারছিলেন না মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিমও। রান বের করতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছিল তাঁদের। এর প্রভাব পড়ছিল রান তোলার গতিতেও। সেদিকে মনোযোগী হতে গিয়েই জিমি নিশামের করা অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন আগের ম্যাচে দারুণ ফিফটি করা মিঠুন (৬)।
একই বোলারের আরেকটি শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ তুলে দিয়ে আসেন মুশফিকও (২১)। ম্যাট হেনরি শুরুর আঘাত হানার পর (৪/২৭) ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে সফরকারীদের বিপক্ষে বড় জয় নিশ্চিত করেন জিমি নিশাম (৫/২৭)। মাঝখানে ৪ ছক্কা ও ৬টি চারের মারে মাহমুদ উল্লাহর অপরাজিত ফিফটি দলকে শুধু দেড় শই পার করে নিতে পেরেছে।
এর আগে রুবেল আর তাসকিনের শুরুর দারুণ বোলিংয়ের মাঝেও ক্যাচ পড়েছে, মিস হয়েছে রান আউটের সুযোগও। তিনটি উইকেট তুলে নেওয়া সাফল্যের পরও অব্যাহত থাকে তা। এই সিরিজেই অভিষিক্ত কনওয়ে ও মিচেল এর ফায়দা তুলতে থাকেন। তাঁরা ছন্দ পেয়ে যাওয়ার পর হারাতে থাকে বাংলাদেশের বোলারদের ছন্দ। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া কনওয়েকে (১২৬) শেষ পর্যন্ত ফেরানো মুস্তাফিজুর রহমানেরও তাই আরেকটু হলে সেঞ্চুরি হয়ে যাচ্ছিল (১০ ওভারে খরচ করেছেন ৮৭ রান)! তবে ৯২ বলে সেঞ্চুরি করা মিচেলকে আর ফেরানোই যায়নি। ইনিংসের শেষ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছানোর আগে যে অন্তত তিনবার তাঁকে ফেরানোর সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
একযোগে সব ভুল ফেরার ম্যাচে তাই স্বাভাবিকভাবেই বিধ্বস্ত তামিমরা!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন