৫৩ বছর পর ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি

৫৩ বছর পর ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি
MostPlay

৫৫ বছর পর ইংল্যান্ড কোন শিরোপা জিতবে সেই আশা নিয়ে ওয়েম্বলিতে উপস্থিত হাজার হাজার ইংল্যান্ড সমর্থকের চিৎকার করতে থাকে। উৎসবের কতশত প্রস্তুতি। গভীর রাত পর্যন্ত পানশালা খোলা রাখা, গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে হৈ-হুল্লোড় করা। সোমবার দেশের সবগুলো ব্যাংক বন্ধ রাখতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে অনুরোধ করেছিল ইংল্যান্ডবাসী। তাদের ঘরে ফিরবে ট্রফি, আর সেই আনন্দে সারাদিন মাতোয়ারা হয়ে থাকবে। ফুটবল ঘরে ফিরবে এমন আশায় বিভোর ছিল তারা। কিন্ত ট্রাইবেকারে স্বাগতিক দর্শকদের হতাশ করে দিয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোতে তাদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নিল ইতালি। অর্থাৎ ফুটবল 'হোমে' নয় 'রোমে' ফিরলো।

ববার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বাঁশি বাজার এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ডেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দ্রুততম সময়ে গোল করে ইউরোর রেকর্ডবুকে নাম লেখান ইংলিশ ডিফেন্ডার লিউক শ। এটি লিউকের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল ইউরোর ফাইনালে। গোলটি করে ইউরো কাপের ইতিহাসে সর্বকালীন একটি রেকর্ড গড়লেন। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে করা তার গোলটিই এখন ইউরোর ফাইনাল ম্যাচে করা দ্রুততম গোল। ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন। তার থেকে অনেক এগিয়ে ৫৭ বছরের অক্ষুণ্ন রেকর্ড নিজের করে নিলেন। গোল হজম করার ৬ মিনিট পরেই সমতায় ফেরার সুযোগ পায় ইতালি। কিন্তু ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেওয়া ইনসাইনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ১৭তম মিনিটে এমারসন অফসাইডের আওতায় পড়লে ভেস্তে যায় ইতালির আক্রমণ। ২৮তম মিনিটে ইতালির ইনসাইনের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৩৫তম মিনিটে সিয়েসা সহজ সুযোগ নষ্ট করলে ব্যবধান কমাতে পারেনি ইতালি। যোগ করা সময়ে ভেরাত্তির আক্রমণ প্রতিহত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। ফলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয়ার্ধে এসে ফরমেশনে পরিবর্তন আনে ইতালি। এতেই বদলে যায় খেলার ধরন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ইংল্যান্ডের রক্ষণ কাঁপিয়ে তোলে তারা। ৬৭ মিনিটে ইতালিকে সমতায় ফেরান বোনুচ্চি। উল্লাসে ফেটে পড়ে স্টেডিয়ামে এক পাশ। সমতায় ফেরার পর দুদলই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষেও স্কোরলাইন ১-১ গোলের সমতায় দাঁড়িয়ে। ফলাফল নির্ধারিত হয় পেনাল্টি শুট-আউটে।

টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন ইতালির বেরার্দি। পিকফোর্ডকে বোকা বানাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি তার। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে গড়ানো শটে এগিয়ে যায় আজ্জুরিরা। ইংলিশরা দায়িত্বটা তুলে দেন হ্যারি কেইনকে। একই জায়গা দিয়ে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। ইতালির দ্বিতীয় শট আটকে দেন ইংল্যান্ড গোলকিপার। ইতালি ভুল করলেও, ভুল করেন নি ম্যাগুয়ের। দুরন্ত শটে এগিয়ে দেন দলকে। ইতালির তৃতীয় শট নেন লিওনার্দো বনুচ্চি। তিনি লক্ষভেদ করলে স্কোর আইন দাঁড়ায় ২-২। ইংল্যান্ডের তৃতীয় শট নেন মার্কাস রাশফোর্ড। কিন্তু বলটি তিনি মেরে দেন বাম পাশের পোস্টে, গোল হলো না। স্কোর লাইন ২-২ থেকে যায়। চতুর্থ শটে ইতালিয়ানদের আবারো ৩-২ ব্যাবধানে এগিয়ে দেন বার্নার্ডোস্কি। ইংল্যান্ডের চতুর্থ শট নেন জ্যাডন সানচো। ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষ ডোনারুমা। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটাকে আরো উত্তপ্ত করে তোলেন ইতালির জর্জিনহো। তার শট রুখে দেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ড। শেষ পর্যন্ত আর পারেনি ইংল্যান্ড। শাকার শট আটকে দেন দোনারুম্মা। ৩-২ ব্যবধানে জিতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি।

শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করলো ইতালি। টানা ৩৪ ম্যাচ অজেয় থেকে ৫৩ বছর পর প্রথম ইউরো জিতলো তারা। ২০০০ ও ২০১২ সালে ইউরোর ফাইনালে উঠলেও ১৯৬৮ সালের পর ইউরোর ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password