কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী আজ

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী আজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন একাধারে প্রেমিক,সৈনিক, সাংবাদিক, কবি-লেখক ও বিদ্রোহী। উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল অনেকটা পৌরাণিক এক অগ্নিদেবতার মতো।

তিনি নিজ হাতে বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত প্রথা ভেঙেছেন, আবার নিজ হাতে গড়েছেন সাহিত্যের নবধারা। তাঁর লেখনীতে একই সাথে বিদ্রোহী ও জাতীয়তাবাদী চেতনার সংমিশ্রণ ঘটেছিল। যার কারণেই তাঁকে বিদ্রোহী কবি ও জাতীয় কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নজরুলের কবিতা ও গানে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে স্ফুরণ দেখা যায়, তা বিংশ শতাব্দীর অনেক কবির রচনাতেই অনুপস্থিত। বিভিন্ন গল্প ও প্রবন্ধেও তাঁর এই চেতনার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

তাঁর লেখা প্রবন্ধগুলোতে তিনি বিশ্বসমাজে বাঙালির পিছিয়ে থাকা এবং এ থেকে মুক্তির উপায় কী হতে পারে তার বর্ণনা করেছেন। বাঙালির সমাজ, সভ্যতা, রাজনীতি ছিল তাঁর আগ্রহের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রকাশ্যে ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন। তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্মেই বাঙালি জাতীয়তাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইংরেজি সাল অনুযায়ী ২৪ মে, ১৮৯৯ সাল) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও। এরই মাঝে তৎকালীন প্রভাবশালী কবি-সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা।

‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেওয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মাত্র ২২ বছর ব্যাপ্তির লেখক জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রায় ৩ হাজার গান, লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস। সাহিত্যের পাশাপাশি সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন নজরুল। নিজের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’তে অভিনয়ও করেছিলেন। তাই শুধু কবি পরিচয়েই আবদ্ধ নন নজরুল।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও নজরুলের কবিতা ও গান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত নজরুলের দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতো। স্বাধীনতার পর নজরুল রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটিকে বাংলাদেশ সরকার রণসংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নজরুল ইসলাম ব্যক্তিজীবনে স্বাধীনচেতা একজন মানুষ ছিলেন।

তাই তিনি জাতিগতভাবেও স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password