নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস

নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস
MostPlay

নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস। ইতোমধ্যেই পর্যটকদের অপেক্ষায় নিজেকে প্রস্তুত করে সাজিয়ে বসে আছে ৪০ আসনের ট্যুরিস্ট বাস “ভ্রমণ বিলাস”। ইদের দ্বিতীয় দিন পিপ পিপ শব্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে চাকা ঘুরতে যাচ্ছে ভ্রমণ বিলাসের।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা উত্তরের সীমান্তবর্তি জেলা নওগাঁ। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটকদের পক্ষে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প খরচে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নত্বাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে চালু হতে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস। আর এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করছে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ।

ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মাঝে এই ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস উদ্যোগটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যেই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, “ভ্রমণ বিলাস” নামের এক ব্যতিক্রমধর্মী ইদ উপহার পেতে যাচ্ছেন নওগাঁবাসী। নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম ইদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনের পর ইদের প্রথম সাতদিন প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাস শহরের মুক্তির মোড় থেকে সকাল ৯টায় যাত্রা শুরু করবে।

মুক্তির মোড়ের পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে এই প্যাকেজের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বাস প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৪৫০ টাকার একটি প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া প্যাকেজের মাধ্যমে ভ্রমণরত পর্যটকরা সকাল ও বিকেলের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পাবেন। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে প্রতিবার ভ্রমণের দিন বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এরপর হলুদ বিহার দর্শন শেষে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে এসে শেষ হবে ওইদিনের ভ্রমণ।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের রুট হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে জেলার সকল ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্যও প্যাকেজ তৈরি করা হবে। পর্যটকরা এই ভ্রমণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পাবেন। তিনি আরো জানান, এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশি বেশি পর্যটকদের আগমনের কারণে ওই সব স্থানের আর্থ সামাজিক অবস্থার আরো উন্নত হবে। চাঙ্গা হয়ে উঠবে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্থাপনা আর সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান। আমুল পরিবর্তন আসবে এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায়। বদলে যাবে স্থানীয় মানুষদের জীবন-যাপনের পদ্ধতি আর সরকারের বাড়তি রাজস্বও আয় হবে।

ঈদের প্রথম সাতদিন এই ট্যুরিস্ট বাস প্রতিদিনই চলবে। এরপর সপ্তাহে দুই দিন এবং পরবর্তিতে পর্যটকদের আগমনের উপর নির্ভর করবে। নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল মোস্তফা কালিমী বাবু বলেন, ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অনেক নিম্ম আয়ের মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও নিজের এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করতে পারেন না। আবার শিক্ষার্থীদের জন্যও এই উদ্যোগ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password