আলোচনা হলো কাদের নিয়ে আর দলে আসলো কারা ?

আলোচনা হলো কাদের নিয়ে আর দলে আসলো কারা ?
MostPlay

স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের চরম ব্যার্থতার পর বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসবে সেটা সবাই ধরেই নিয়েছিল। হয়েছেও তাই। বিশ্বকাপের পর থেকেই দলের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ইতিমধ্যে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে যে নামটি বেশি শোনা যাচ্ছিল তা হলো অনূর্ধ ১৯ দলের ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে। ‘টিম ডিরেক্টর’ খালেদ মাহমুদের তত্ত্বাবধানে গত কিছুদিন ধরে যে কজন ক্রিকেটার অনুশীলন করছিলেন, তাদের মধ্যেও ছিলেন তরুণ ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।

টোয়েন্টির জন্য পারভেজের ব্যটিং অনেক বেশি উপযোগী। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান তিনি, হাতে জোর অনেক, ব্যাটিং তার ভয়ডরহীন। কিন্তু ‘বাঁহাতি’ হওয়াটাই বিপক্ষে গেছে তার এখানে। পারভেজ হোসেন ইমন ছাড়া অনূর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী মিডল অর্ডার ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়কে নিয়েও হচ্ছিল আলোচনা। তবে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের জন্য দল ঘোষনা করা হয়েছে তাতে যায়গা হয়নি এই দুই তরুণ ব্যাটারের। বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে ৬টি পরিবর্তন করে যে দল ঘোষনা করা হয়েছে তাতে জায়গা পেয়েছেন টেস্ট ওপেনার সাইফ হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি ও অনুর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই সাইফকে মনে করা হয় বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের উপযোগী ব্যাটসম্যান। তিনি নিজেও সেভাবেই গড়েছেন নিজেকে। ৫টি টেস্টও এর মধ্যে খেলে ফেলেছেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে। সেখানে তার টেকনিক, পায়ের কাজ ও টেম্পারামেন্ট, ঘাটতি ফুটে উঠেছে সব জায়গায়। যেখানে তার টেস্ট সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, সেখানে হুট করে নেওয়া হলো নতুন চ্যালেঞ্জে। মাঝে মাঝে ইমার্জিং দল ও ‘এ’ দলের হয়ে বড় বড় ছক্কা হাকাতে দেখা গেলেও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের আগ্রাসী মনোভাবের বেশ অভাব তার মধ্যে রয়েছে। তার টি-টুয়েন্টি ব্যাটিং পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলে। গত জুনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে ১৪ ইনিংসে ২৮.০৭ গড়ে ৩৬৫ রান করেন সাইফ। স্ট্রাইক রেট ছিল মোটে ১১৩। সর্বোপরি সাইফ এখন পর্যন্ত ২৮টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচের ২৫টি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে ৫ ফিফটির সাহায্যে করেছেন ৬৮২ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৫.৫৯।

দলে ডাক পাওয়া আরেক ক্রিকেটার ইয়াসির আলী রাব্বি। তাকে দুই বছর যাবত দলের সাথে রাখা হচ্ছে কিন্ত কোন ম্যাচে সুযোগ দেয়া হছিল না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল। তবে মজার ব্যাপার হলও তাকে এতদিন বাংলাদেশ টেস্ট দলের সাথে রাখা হয়েছিল। সেই টেস্ট ব্যাটারকে এবার টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের ব্যাটার বানিয়ে মাঠে নামিয়ে দেয়া হবে সেটা বলাই যায়। তবে রাবির টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের পরিসংখ্যানটা একেবারে মন্দ নয়। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৫০ ইনিংস ব্যাট করে ১১৫৮ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১২৩.৫৮। তবে ফার্স্টক্লাস ম্যাচে তার গড় ৫০ এর অধিক। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাকে টেস্ট দলের সাথে রাখা হছিল। আলোচনার বিষয় হলো যে ব্যাটারকে আমরা টেস্ট ব্যাটার হিসেবে প্রস্তুত করছিলাম তাকে কেন হঠাৎ করেই তাকে টি-টুয়েন্টি দলে অর্ন্তভুক্ত করা। তাকে কি জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না। আপনি সারাবছর সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশুনা করলেন আর পরীক্ষায় আসলো সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্ন। এখন প্রশ্ন হলো সেই পরিক্ষায় যদি কেউ পাশ না করে তাহলে ছাত্রের দোষ কতখানি?

পাকিস্তানের বিপক্ষে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে অনূর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীকে। মুলত ব্যাকআপ উইকেট কিপার হিসেবে তাকে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার অর্ন্তভূক্তি সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। বিশ্বকাপের আগে কিংবা পরে তাকে নিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে আলোচনাই শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই তার অর্ন্তভূক্তি বড় চমক বলাই যায়। এছাড়া আকবর আলীর টি-টুয়েন্টি পরিসংখ্যান কিন্ত তার হয়ে কথা বলতে পারছে না, এমনকি তার সাম্প্রতিক ফর্ম। এখন পর্যন্ত টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ২১ ইনিংসে ব্যাট করে ১২৬.৬৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৩৭ রান, সর্বোচ্চ ৪৫*।

দলের আরেক অর্ন্তভূক্তি নাজমুল হোসেন শান্ত। তার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটার পরিসংখ্যান ভাল হলেও বিসিবি তাকে টেস্ট ব্যাটার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। তাকেও হটাৎ করেই টি-টুয়েন্টি দলে ডাকা অনেককেই অবাক করেছে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে দূর্ভাগা খেলোয়াড়টির নাম হয়তো রুবেল হোসেন। গত ৭ মাস ধরে দলের সাথে আছেন। বিশ্বকাপের কোন ম্যাচেই নামার সুযোগ পাননি এই অভিজ্ঞ পেসার এমনকি বাঙ্গালদেশের শেষ ২১ ম্যাচে কোন সুযোগ পাননি অথচ তাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। কোন ম্যাচ না খেলিয়ে একজন খেলোয়াড়ের পারপফর্মেন্স বিবেচনা করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্নবোধক চিহ্নটা আরও বড় হয়ে যায় যখন খেলোয়াড়টি ইতিমধ্যে দেশের হয়ে ১৫৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password