আবারও ঝাঁজ বাড়ছে কাঁচা মরিচের

আবারও ঝাঁজ বাড়ছে কাঁচা মরিচের

বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় সম্প্রতি অস্থির হয়ে উঠেছে কাঁচা মরিচের বাজার। ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি ও দেশিয় কাঁচা মরিচের সরবরাহ ভালো থাকায় বেশ কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পরে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে কাঁচা মরিচের দাম। সরবরাহ কমের অজুহাতে দুদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরী হাঁকিয়েছে।

একইভাবে আমদানি কমের অজুহাতে ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচের দামও বাড়তি। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবকটি সবজি বিক্রেতার দোকানেই কাঁচা মরিচের বেশ সরবরাহ লক্ষ্যা করা গেছে।

তারপরেও দাম ঊর্ধ্বমুখি দুদিন পূর্বে প্রতি কেজি দেশিয় কাঁচা মরিচ ১শ' টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২শ' টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত কাঁচামরিচের দাম খানিকটা ঊর্ধ্বমুখি। দুদিন আগে বন্দরে যে কাঁচা মরিচ ৯০ থেকে ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল বর্তমানে তা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা মেহেদুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে কাঁচা মরিচ তার দামের ঝাঁজ ছড়ানোর পর অনেকটাই দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। কঁচা মরিচের দাম কমতে কমতে ৮০ টাকা থেকে ১শ টাকার মধ্যে উঠা-নামা করছিল। এতে করে আমাদের মত নিন্ম আয়ের মানুষদের কাঁচা মরিচের কিনে খাওয়া সুবিধা হয়েছিল।

কিন্তু বৃষ্টির অজুহাতে আবারও কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বাড়তে শুরু করেছে। দুদিনের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ বেড়ে ২শ টাকায় উঠে গিয়েছে কাঁচামরিচের দাম। হিলি বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা বিপ্লব শেখ বলেন, ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হলেও স্থানীয় হিলি বাজারে এসব কাঁচা মরিচের সরবরাহ থাকে না।

যার কারণে দেশিয় কাঁচা মরিচ দিয়েই স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে কাঁচা মরিচ উঠতে শুরু করায় বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। আমরা প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি কাঁচা মরিচ।

তবে গত তিন দিন ধরে দেশে প্রচণ্ড পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারণে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলতে পারেনি। এছাড়া গোড়া নড়ে গেলে কাঁচা মরিচের গাছ মরে যাবে এই কারণেও অনেক কৃষক ক্ষেতে নামছেনা কাঁচা মরিচ তুলতে।

এতে করে বাজারে চাহিদার তুলনায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়েছে। হিলি স্থলবন্দরে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা মোস্তফা হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে বাড়তি পরিমানে কাঁচা মরিচ আমদানির ফলে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে গিয়েছিল। কয়েকদিন ধরেই বন্দরে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

তবে আবারও গতকাল থেকে বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি কমে এসেছে যার কারণে হঠাৎ করেই দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত রেখেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।

তবে ভারতে গত তিনদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলতে পারেননি। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে গতকয়েকদিন ধরে, যে হারে বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল সেই তুলনায় আমদানির পরিমান কিছুটা কমেছে।

গত ৪/৫দিন ধরে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ ট্রাক করে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল। কিন্তু গতকাল তা কমে মাত্র ৩ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। বন্দর দিয়ে চলতি সপ্তাহের শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪৫টি ট্রাকে ৩০৮ টন ৫১ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুর এর সহকারি পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যদি কোন পণ্যের অহেতুক মুল্য বৃদ্ধি করে সেই অভিযোগ প্রমানিত হলে আর্থিক জরিমানাসহ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রসঙ্গত, দেশে কাঁচা মরিচের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে গত ২৫শে জুন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর ফলে দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ২৬ শে জুন ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়। হিলি স্থলবন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক কয়েক হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password