সময়ের কিচ্ছুক্ষনে

সময়ের কিচ্ছুক্ষনে

নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো’। থাকে। কিংবা কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।শিশুর জীবন বিকাশের সব ক্ষেত্রেই পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার থেকেই শিশু সব ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক সম্বন্ধে প্রথম অবগত হয়। শিশুর মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি কেমন হবে অন্যের প্রতি সে কি রূপ মনোভাব পোষণ করবে এবং কি ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা অনেকাংশেই শিশুর পারিবারিক কাঠামো দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ একটি শিশুকে সঠিকভাবে বড় করতে হলে পরিবারে মা, বাবার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে আদর্শভাবে গড়ে তুলতে পারলে শেষ বয়সে, মা-বাবা বৃদ্ধাশ্রম যাওয়া থেকে রেহাই পেতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে জনৈকা মহিলা জামিলা একটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন, তার ভাষায়, দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায় একটি হোটেলের ধারে, বাস এর জন্য। দোকানে একটা মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে আসলো, এক প্লেট সিঙ্গারার অর্ডার দিল যাতে ৫টি থাকে। হবে ঐ ছেলের বয়স ৫ অথবা ৬। হঠাৎ জামিলা, ঐ মা ও ছেলের কথোপকথন যখন শুনতে পেলেন, তখন একটি সিঙ্গারা ঐ প্লেটে ছিল। জামিলা যা বুঝলেন, মা আর ছেলে দুটো করে খেয়েছে আর বাকি আছে একটা। তিনি দেখলেন হঠাৎ বাচ্চাটি চিৎকার করে কাঁদছে। আর ওই বাচ্চার চিৎকারে আশেপাশের সবাই ওদের দিকে তাকাচ্ছে। যা বোঝা গেল, ঐ শেষ সিঙ্গারা টা বাচ্চাটা খেতে চেয়েছে। কিন্তু তার মা এই সিঙ্গারা ভাগ করেছে দুই ভাগে, আধা তার ছেলে ও বাকি আধা তার নিজের। জামিলা অবাক হয়ে মা ও ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কেননা এমন তো দেখেননি কোন দিন। তিনি ভাবতে লাগলেন মা মানে, নিজের চোখে দেখে নিজে না খেয়ে বাকিদের খাওয়ানো।

প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলা, আমি না এটা খেতে পছন্দ করি না। সবার শেষে খাওয়া, যেটা কেউ পছন্দ করে না, যা উচ্ছিষ্ট তাই মা এর কপালে জোটে। জামিলা খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে ঐ মহিলাটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। চারিদিকে গুঞ্জন উঠেছে। সবাই বলাবলি করছে মা নাকি, বাচ্চাটা একটা সিঙ্গারা খাবে তাও আবার দুজনে ভাগ করে খেতে হয় নাকি। আমরা তো পারলে নিজের মুখের শেষ অংশটাও বাচ্চাদের মুখে দিয়ে দিতে চাই। এক ভদ্রলোক মহিলার দিকে তাকিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছিলো, দেখে তো মনে হয় সম্ভ্রান্ত ও ধনী ঘরের। ওই বাচ্চার জন্য আর এক প্লেট সিঙ্গারা কিনে দিলেই তো হয়, আরে বাচ্চার জন্য করতে পারেনা, আর বর, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য করবে। অন্য আর এক মহিলার উক্তি, আমার তো বাচ্চা এরকম করলে কোনো কিছু দাঁতেই কাটি না, এমনি তো হওয়া উচিত। জামিলা নিজে এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, তখন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না । আসলে তার চেনা ছবিগুলোর সাথে মিলে না যে। তিনি যোগ করেন, মহিলাটি সম্ভবত চারদিকের গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছিলেন। আর সিঙ্গারা বিক্রেতা বললেন আপা আর একটা সিঙ্গারা দেই।

তখন আসলো আসল কথা, মহিলাটি সবাইকে শোনানোর জন্যই উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, না ভাই আমি কিনবো না, আমার কাছে পয়সা আছে, আমি ভালো চাকরিও করি কিন্তু আমার ছেলের এ অভ্যাস হবে কেন। বাচ্চাদের বুঝতে হবে সব ভালো জিনিস মা বাবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়। মা-বাবা শুধু দিয়েই যাবে। এই অভ্যাস আমি একদম পছন্দ করি না। ভবিষ্যতে ওর এ অভ্যাস রয়েই যাবে এবং অন্য লোকের সাথে এরকম আচরণ করবে। জামিলা অবাক দৃষ্টিতে মা ও বাচ্চার দিকে অপলত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি দেখলেন উনি সিঙ্গারার অর্ধেকটি বাচ্চাকে দিলেন আর অর্ধেকটি নিজে খেতে লাগলেন। সিঙ্গারা খাওয়ার পর বাচ্চাটি আবার চকোলেটের জন্য আব্দার করলো। মহিলা এবার বাচ্চাটাকে একটি কিনে দিলেন, বাচ্চাটি চকোলেটের অর্ধেক তার মাকে দিলো এবং আর অর্ধেক নিজে খেতে লাগলো।

মহিলাটি তার ছেলের হাত ধরে রাস্তা অতিক্রম করে ব্রিজের উপর দিয়ে চলতে লাগলেন। যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল জামিলা তাদের দিকে, পলক না ফেলে তাকিয়েই ছিলেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password