গুলশান-২ নম্বরে অগ্নিকাণ্ডে আরও একজনের মৃত্যু

গুলশান-২ নম্বরে অগ্নিকাণ্ডে আরও একজনের মৃত্যু
MostPlay

গুলশান-২ নম্বরে আবাসিক ভবনের অগ্নিকাণ্ডে আরও একজন মারা গেছেন। গুরুতর দগ্ধদের চিকিৎসায় ১৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এদিকে আগুন নেভানোর পর, মধ্যরাত থেকে সিলগালা করে রাখা হয়েছে গুলশান ২ নম্বরের আবাসিক ভবনটি। বাসাবাড়িতে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন।

যেসব ফ্লোরে আগুন লাগেনি, সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করছে ফায়ার সার্ভিস। কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটিও। গুলশানের একটি আবাসিক ভবনে লাগা ভয়াবহ আগুনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ রাজু। আগুন লাগার সময় তিনি ১২তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো।

জানা গেছে, সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে সিকদার মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন রাজু। তিনি ওই ভবনের ১১ তলায় বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১২ তলা থেকে লাফ দেওয়ার পর গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁকে ঘটনাস্থলের কাছেই একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিনি মারা যান। নিহতের ভাই সজীব মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা লাশ গ্রামে নিয়ে গেছেন। দাফনের প্রস্তুতি চলছে। মোহাম্মদ রাজু ঢাকায় থাকতেন। তাঁর পরিবার গ্রামে থাকতেন।

ভবনের ১২ তলায় তিনি দুই বছর ধরে কাজ করতেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোস্তাকিম বাদশা বলেছেন, পরিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে মোহাম্মদ রাজুর লাশ নিয়ে গেছে। এদিকে, এ ঘটনায় শামা রহমান নামের এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন।

তার চিকিৎসায় এরই মধ্যে ১৮ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আহত আরও দুজনও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। তবে তারা ঝুঁকিমুক্ত। আজ সকাল থেকে বহুতল ওই ভবনে কাজ শুরু করেছে অগ্নিনির্বাপকবাহিনী। তাঁরা বলছেন, ওই ভবনে ২৬ ফ্ল্যাটে ২৩ পরিবার বসবাস করতেন। সেখানে খোঁজ করে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। গুলশান-২ এর ১০৪ নং সড়কের বাসা- ২/এ সকালে সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ সদস্য।

গতকাল রোববার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ওই ভবনে আগুন লাগে। অগ্নিনির্বাপকবাহিনীর ১৯টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে গতকাল রাতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন (৩০)। গত রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন তাঁর ছোট ভাই জুলহাস হোসেন। তিনি ওই ভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন।

হাসপাতালে আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে। ভবন থেকে বের হওয়া একাধিক ফায়ার সার্ভিস কর্মী বলেন, আগুন নিভলেও ভবনটির সপ্তম তলায় ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। সেখানে নতুন করে পানি দেওয়া হয়েছে। আগুনের সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা অঞ্চল-৩ এর উপসহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তম তলার সিঁড়ির পাশেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। বের হওয়াতে ঝুঁকি থাকার কারণে অনেকেই আটকা পড়েন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে একটু পর আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানানো হবে। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী রায়হান উদ্দিন বলেন, ভবনের বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগ এখনো দেওয়া হয়নি। আগুনের ঘটনায় ভবনটি থেকে মোট ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ১৭ জন।

প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুলশান দুই নম্বর এলাকার ১২ তলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট। আগুন থেকে রক্ষা পেতে ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই আশ্রয় নেন ছাদে। বড় মই দিয়ে কয়েকজনকে উদ্ধারও করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে উপরের ফ্লোরগুলোতেও । আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে ফায়ার সার্ভিসের আরও ১৬টি ইউনিট যোগ দেয়। সাথে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও। দ্রুত উদ্ধার কাজে অংশ নেন তারা। মোট ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এত দীর্ঘ সময় লাগার পেছনে উৎসুক জনতার ভিড়কেই দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিস, মেয়র এবং নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password