উপমহাদেশে আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র তৈরির সময় এক-দুই বছর কমানো নিয়মিত একটি চিত্র। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে বেশিদিন পাওয়ার আশায় বয়স কমিয়ে দেয়া হয় প্রায় সবার। সেগুলো সচরাচর জনসম্মুখে আসে না বা গোপনই রাখা হয়।
কিন্তু এখানে পুরোপুরি ব্যতিক্রম পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদি। যিনি নিজেই বলছেন তার বয়স আসলে সবার জানা বয়সের চেয়ে তিন বছর বেশি। যা এবার নতুন করে উসকে দিয়েছে তার বয়স বিতর্ক।
আজ (১ মার্চ) আফ্রিদির জন্মদিন। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন অঞ্চলে জন্মেছেন আফ্রিদি। কিন্তু কত সালে?- তা নিয়েই রাজ্যের আলোচনা। কেননা দুই জায়গায় মিলছে দুই রকম তথ্য। আফ্রিদি নিজে বলছেন, তার বয়স আজকে ৪৪ পূর্ণ হলো। অথচ আইসিসির দস্তাবেজে আফ্রিদির বয়স আজ ৪১।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, আফ্রিদির জন্মতারিখ ১ মার্চ ১৯৮০। যার মানে দাঁড়ায় আজ তার ৪১তম জন্মদিন। কিন্তু আফ্রিদি নিজে টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, আজ তিনি ৪৪ বছর পূরণ করেছেন।
আফ্রিদি টুইটারে লিখেছেন, ‘জন্মদিনের দারুণ সব শুভেচ্ছাবার্তার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আজকে ৪৪ (তম জন্মদিন)। পরিবার ও ভক্তরা আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ। মুলতানে হয়ে (পিএসএল) উপভোগ করছি। আশা করছি, মুলতান সমর্থকদের জন্য ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারব।’
যেখানে আফ্রিদি নিজে বলছেন তার আজ ৪৪তম জন্মদিন, সেখানে সব আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র মোতাবেক আজ আসলে ৪১তম জন্মদিন। বয়সের এই বিভ্রান্তি সমর্থকদের মাঝেও সৃষ্টি করে দুই রকম প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ মনে করছেন, বয়স লুকিয়ে প্রতারণা করেছেন আফ্রিদি। কারও মতে, বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যাই কেবল।
এক ভক্ত লিখেছেন, ‘এটা উল্লেখ করার কিছু নেই। ৪১ হোক বা ৪৪- আফ্রিদির বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যাই শুধু।’ আরেক ভক্ত আফ্রিদির বার্তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘সবাই যেমনটা জানে যে, ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আফ্রিদির অভিষেক হয়েছে। তার মানে মাত্র ২৫ বছরে ২৮ বছর বড় হয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি।’
অবশ্য ১৬ বছর বয়সে অভিষেকের বিতর্কটা আগেই সমাধান করেছেন আফ্রিদি। ২০১৯ তিনি ‘গেম চেঞ্জার’ নামক নিজের বইয়ে লিখেছিলেন, ‘আমার বয়স তখন ১৯ ছিল। আমার বয়স ১৬ ছিল না, তারা যেমনটা বলে। আমার জন্ম আসলে ১৯৭৭ সালে। এখানে কর্তৃপক্ষ আমার বয়স ভুল লিখেছে।’
বয়সের বিতর্ক যাই হোক না কেন, আফ্রিদির দীর্ঘ ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবশ্য এতে কোনো দাগ পড়বে না। লেগস্পিনিং এই অলরাউন্ডার ২৭ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরির সাহায্যে ১৭১৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৪৮টি উইকেট। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৩ ম্যাচে ৫৬৯৫ রানের সঙ্গে তার ঝুলিতে রয়েছে ২৬৬ উইকেট।
আফ্রিদি সবচেয়ে সফল ছিলেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৯৮ ম্যাচে ৮০৬৪ রানের সঙ্গে তার শিকার ৩৯৫টি উইকেট। ১৯৯৬ সালের নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ও প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন আফ্রিদি। যা প্রায় ১৮ বছর ধরে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড ছিল।
এছাড়া কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৯ ম্যাচে ১৪১৬ রান ও ৯৮ উইকেট নিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলেছিলেন আফ্রিদি। সবমিলিয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি তিনি এ পর্যন্ত খেলেছেন ৩২৬ ম্যাচ। যেখানে তার সংগ্রহ ৪৩৯৫ রান ও ৩৪৪ উইকেট।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন