হিন্দু হলে ১০০ টাকা, মুসলিম হলে ২১০০০ জরিমানা

হিন্দু হলে ১০০ টাকা, মুসলিম হলে ২১০০০ জরিমানা
MostPlay

ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করে পড়শি দেশের নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য মোদী সরকারের তৈরি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে আদৌ খুশি নয় বাংলাদেশ৷ ঠারেঠোরে বেশ কয়েক বার তাদের আপত্তির কথা প্রকাশও করেছে শেখ হাসিনার সরকার৷ সেই অসন্তোষের আগুনে বাড়তি ইন্ধন জোগাচ্ছে ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত 'রুল' বা বিধি', যেখানে ভিসায় উল্লিখিত নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় এ দেশে থাকার জন্য একজন মুসলিম বাংলাদেশি নাগরিককে সে দেশেরই একজন হিন্দু নাগরিকের তুলনায় কয়েকশো গুণ বেশি জরিমানা দিতে হচ্ছে৷

ভাবতে অবাক লাগলেও এই ঘটনাই সত্যি, যেখানে বিদেশমন্ত্রকের তৈরি বিধি অনুযায়ী দু'বছরের বেশি সময় ধরেই একজন মুসলিম বাংলাদেশি নাগরিক হিন্দু বাংলাদেশি নাগরিকের তুলনায় বেশি পরিমাণ জরিমানা প্রদান করছেন৷ এর আগে ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রকের তরফে ২০১৮ সালে তৈরি এই রুলের বিরোধিতা করে কয়েক বার মৃদু ক্ষোভ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার৷ কিন্তু তাতে কোনও কাজের কাজ হয়নি, সমস্যা যে জায়গায় ছিল, সেখানেই থেকে গিয়েছে৷

সূত্রের খবর, বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য এ বার আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা ভাবছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার৷ দু'দেশের বিদেশমন্ত্রকের মধ্যে আলোচনায় ভারত সরকারের ভিসা জরিমানা সংক্রান্ত এই বিভেদ নিয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক আমলার কথায়, 'আগেও এই বিষয়ে সরকারি স্তরে অভিযোগ জানানোর কথা ভাবা হয়েছিল, কিন্তু দু'দেশের সম্পর্কের কথা ভেবে তা কড়া ভাবে উত্থাপন করা হয়নি৷ তবে এ বার এই বিষয়ে সরকারি স্তরে লিখিত অভিযোগ করা হতে পারে৷'

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন ঢাকা সফরের আগে মাথাচাড়া দিয়েছে এই ভিসা বিতর্ক, যার মূলে রয়েছে ভারত সরকারের তৈরি একটি 'বিধি'৷

ভিসা সংক্রান্ত এই জটিলতা ঠিক কোথায়? এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, ভারতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে কেউ যদি তাঁর ভারতীয় ভিসায় নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় এ দেশে থাকেন, তা হলে তাঁকে ভারতীয় টাকায় মোট কত টাকা জরিমানা দিতে হবে, সেই বিষয়ে ভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে৷ ভারত সরকারের বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা (হিন্দু-শিখ প্রভৃতি) নির্ধারিত ভিসার সময়ের অতিরিক্ত ৯০ দিন পর্যন্ত এ দেশে থাকার জন্য মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে থাকেন৷ অন্য দিকে, ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে একই পরিমাণ অতিরিক্ত সময় এ দেশে থাকার জন্য এই তিনটি দেশের একজন মুসলিম নাগরিককে দিতে হয় ২১,০০০ টাকা৷ একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে৷

ধরা যাক বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার লিটন দাস ও সইফ হাসান ভিসায় উল্লিখিত সময় পার করে অতিরিক্ত ৬০ দিন ভারতে থাকলেন৷ তা হলে বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিক হওয়ার জন্য কম জরিমানা দিতে হবে লিটন দাসকে৷ এর আগে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত সময় ভারতে থাকার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটার সইফ হাসানকে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্রে৷

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে৷ এ দেশের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা এফআরআরও-তে গিয়ে তাঁদের এই টাকা জমা দিতে হয়৷ বাংলাদেশ-পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে আসা সে দেশের কোনও সংখ্যালঘু ব্যক্তি যদি ভিসার অতিরিক্ত দু'বছর ভারতে থাকেন, তা হলে তাঁকে দিতে হবে ২০০ টাকা৷ মুসলিম নাগরিকের ক্ষেত্রে এই জরিমানার পরিমাণ বেড়ে হয় ২৮,০০০ টাকা৷

সর্বশেষ ধাপে আরও বৃদ্ধি পায় এই জরিমানার পরিমাণ, যেখানে দু বছরের বেশি অতিরিক্ত সময় এদেশে থাকার জন্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের একজন সংখ্যালঘু নাগরিককে দিতে হবে ৫০০ টাকা জরিমানা৷ এই তিনটি পড়শি দেশের মুসলিম নাগরিকদের ক্ষেত্রে ভিসার অতিরিক্ত দু'বছরের বেশি সময় ভারতে থাকার কারণে এই জরিমানার পরিমাণ হয় ৩৫,০০০ টাকা৷

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password