ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত নাটক-সিনেমা

ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত নাটক-সিনেমা

১৯৭৬ সালে নির্মিত ‘আর-রিসালাহ’ তথা ‘দ্য ম্যাসেজ’ ছবিটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত। চলচ্চিত্রটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনীভিত্তিক এক ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র। ৩ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন সিরীয়-মার্কিন পরিচালক মুস্তফা আক্কাদ। ছবিটির আলোচনা সমালোচনা দুটি দিকই রয়েছে। এ চলচ্চিত্রটিতে রাসুলের সা. নবুয়্যত প্রাপ্তির পর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইসলামের ইতিহাস অবিকৃতভাবে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে যে অল্প সংখ্যক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাস অবিকৃত থাকলেও সিনেমাটি মূলত সাহাবাদের বানোয়াট চরিত্র উপস্থাপনের কারণেই সমালোনার মুখে পড়ে। ছবিটি নির্মাণ হয়েছিলো আরবি এবং ইংলিশ এই দুটি ভাষাতেই। একই শ্যুটিং সেটে দুবার করে আরবি এবং ইংলিশে অভিনয় করিয়েছিলেন পরিচালক মুস্তফা আক্কাদ। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ছবিটির ডাবিং হয়েছে।

২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া- দ্যা মেসেঞ্জার অব গড নিয়ে ভালোই সমালোচনা হয়েছে। ছবিটি আলোচিত হবার বিপরিতে সমালোচিতই হয়েছে বেশ। নির্মাণকালীন সময় থেকেই চলচ্চিত্রটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ ‘দ্য ম্যাসেজ’ সহ অন্যান্য ইসলামি চলচ্চিত্র এবং ধারাবাহিকে যেরকম রাসুলের নিকটাত্মীয়দের না দেখানোর প্রথা প্রচলিত আছে, সেটি ভঙ্গ করে এই চলচ্চিত্রে রাসুল সা. এর মা আমিনা, দুধ-মা হালিমা, চাচা আবু তালেবসহ ঘনিষ্ঠ প্রায় সবাইকেই দেখানো হয়েছে। এমনকি, বালক রাসুল সা. এর শুধুমাত্র চেহারা ছাড়া পুরো অবয়ব দেখানো হয়েছে ছবিটিতে।

সিনেমাটির কাহিনী নবীজি স. এর বাল্যকালেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এতে শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে যেসব ব্যাপারে অধিকাংশ মতবিরোধ রয়েছে, সেগুলো উঠে আসেনি। তারপরেও সিনেমাটিতে প্রদর্শিত কাহিনী বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাসুল সা. এর বাল্যকালের জীবনী সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের যত রকম বর্ণনা পাওয়া যায়, কাহিনীকার সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু মনগড়া ঘটনা সংযুক্ত করে সমালোচনার মাত্রা বাড়িয়েছেন।

উদাহরণস্বরুপ, সিনেমায় দেখানো হয়, হালিমার উট দড়ি ছিঁড়ে মক্কার হাট-বাজারের ভেতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমিনার ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হয়। উটটিকে ধরার জন্য পিছু পিছু হালিমাও সেখানে উপস্থিত হলে তাদের পরিচয় হয় এবং মা হালিমা শিশু নবীজিকে দেখতে পেয়ে তাকে আদর করে কোলে নিতে গেলে নবীজি দুধ পান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু ইবনে হিশাম, রাহিকুল মাখতুমসহ সর্বজনগ্রাহ্য রাসুলের জীবনী গ্রন্থগুলোতে এ ধরনের কোন অলৌকিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় না। সিনেমাটির কাহিনী এরকম বিতর্কিত হওয়ায় এটি অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রেই প্রদর্শনের অনুমতি পায়নি।

ইসলাম নিয়ে চরম বিদ্বেষের সিনেমাও হয়েছে। আর সেই সব সিনেমার জন্য পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে পরিচালককে। যেমন ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের একটি সিনেমার কথাই বলা যায়। স্যাম বেসাইল নামে এক আমেরিকান ইহুদি এর ডিরেক্টর। সে শ খানেক ইহুদিদের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ান ডলার তুলে সিনেমাটা বানিয়েছে। বি-গ্রেড সিনেমা-কোন এক্টিং নেই। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কমেডি। আরো জঘন্যভাবে তাকে উপস্খাপন করা হয়েছে। সারাবিশ্বে তোলপাড় হয়ে যায়। পরিচালককে জেল খাটতে হয়।

ইরানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কিছু ইসলাম ধর্ম নিয়ে সিনেমা। যেমন ‘সেইন্ট ম্যারি’, ‘দ্যা মেসিআহ’, ‘আব্রাহাম- দ্যা ফ্রেন্ড অব গড’, ‘দ্যা কিংডম অব সোলোমান’, ‘দ্যা ফেইথফুল ডে’, ‘হি হু সেইড নো’

ইজিপ্টে নির্মাণ হয়েছে ‘খালিদ ইবনে আল ওয়ালিদ’, ‘উয়াইস আল কারনি’, সিরিয়ায় নির্মাণ হয়েছে ‘মুলক আল তওফা’, লিবিয়ায় নির্মাণ হয়েছে ‘লায়ন অব দ্যা ডেজার্ট’ সিনেমাগুলোর নাম উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায়।

এ সময়ের অন্যতম সেরা সিনেমা:

এ সময়ে ইসলাম ধর্মের নানা নিয়মনীতি নিয়ে মানুষের ভুল বিশ্লেষণ ও প্রয়োগ নিয়েও অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ হয়েছে।  ‘ওয়াজদা’ সিনেমাটির কথাই বলা যায়। সৌদি আরবের প্রথম সিনেমা যার প্রতিটি দৃশ্যের চিত্রায়ন হয়েছে রাজধানী রিয়াদে। পরিচালক হাইফা আল মনসুর ঠিক এমনটিই চেয়েছিলেন। হাজারো সামাজিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বানাতে পেরেছেন জীবনমুখী এই সিনেমা। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল তাঁর লিঙ্গ পরিচয়, পুরুষতান্ত্রিক ঐ আরব সমাজে একজন নারী পরিচালক হিসেবে ফিল্ম বানানোর স্বপ্ন দেখাটা অনুমান করা যায়? কিছু জার্মান প্রডিউসার আর খোদ সৌদি রাজপরিবারের এক সদস্যের সহযোগিতায় হয়ে যায় স্বপ্নপূরণ পরিচালক আল মনসুরের। আমেরিকান কূটনীতিক স্বামীর পৃষ্টপোষকতাও মিলেছে প্রতিটি মুহূর্তে।

মুভির নাম ভূমিকার কিশোরী ওয়াজদা নিজেও দেখে এক স্বপ্ন, একদিন সে বাইসাইকেল রেসে হারাবে সমবয়সী কিশোর আবদুল্লাহকে। স্কুলে যাবার রাস্তায় প্রতিদিনই দেখে তাঁর পছন্দের এক সবুজ রঙের বাইসাইকেল সাজিয়ে রেখেছে মহল্লার দোকানদার ক্রেতার আশায়। মা স্পষ্ট বলে দিয়েছে ঐ বয়সের কোনও মেয়ে রিয়াদের রাস্তায় সাইকেলে ঘুরে বেড়ায় না তাই সাইকেল কেনার স্বপ্ন দেখা বাদ দিতে। কতই বা বয়স ওয়াজদার... ওর সমবয়সী ১১/১২ বছরের বালিকারা তো স্বপ্নই দেখা শুরু করে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। আবদুল্লাহ তো ঠিকই সাইকেল চালিয়ে চষে বেড়ায় মহল্লার অলিগলি। দমে যাওয়ার পাত্রী নয় বালিকাটি, পয়সা জমাতে শুরু করে নিজেই কিনবে বলে সেই সবুজ সাইকেল। স্কুলে সহপাঠীদের কাছে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মিক্সড অডিও টেপ আর হাতে বানানো লেস ফিতার ব্রেসলেট লুকিয়ে লুকিয়ে বেঁচে পয়সা জমায় ওয়াজদা।

এই টাইপের আরও কিছু ভালো সিনেমা গত দুই দশকে আরব বিশ্বের ইরান, লেবানন, মিশরে হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক আরব সমাজে নারীর অবস্থান অনেকক্ষেত্রই ফুটে উঠেছে বিদ্রূপাত্মক স্যাটায়ারধর্মী সিনেমার গল্পে। ওয়াজদা মুভিটা এমন এক আরব পরিবারের জীবনধারা দেখায় যারা বসবাস করে পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল সমাজের রাজধানীতে। বয়ঃসন্ধিকালীন এক কিশোরীর সাইকেল চালানোর স্বপ্ন দেখার গল্পেই দেখতে পারি নিপাট ভদ্রলোক এক আদুরে পিতার বহুবিবাহের বাসনা। পূত্র সন্তান প্রসবের অক্ষমতা আর স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের আগ্রহে মানসিক যন্ত্রণার দহনে পুড়তে থাকা ওয়াজদার মায়ের চরিত্রটি চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছে সৌদি আরবের নারী সমাজের অবস্থান।

পরিচালক হাইফা আল মনসুরের নির্দেশনা আর ওয়াজদা চরিত্রের কিশোরী অভিনেত্রী ওয়াদ মোহাম্মেদের অভিনয় মনে দাগ কেটে থাকবে অনেকদিন।

এমন আরোকিছু সিনেমা আছে, যেমন- ‘ডুখতার’, ‘অ্যা সেপারেশন’, ‘টু অ্যাঞ্জেলস’,‘ ফাইভ ব্রকেন ক্যামেরা’, ‘বারান’, ‘দ্যা হোয়াই বেলুন’, ‘অ্যাট ফাইভ ইন দ্যা আফটারনুন’ ও ‘দ্যা কালার অব প্যারাডাইস’, ‘আজারি আকু ইসলাম’।

ভারতে ইসলাম ধর্মের সিনেমা:

পাশের দেশ ভারতের মালায়ালামে ‘সন অব আদম’ নামে সুন্দর একটি সিনেমা আছে। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় এক দম্পতির হজে যাওয়ার তীব্র আকঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণের গল্প বলেছে।

বলিউডে তো ধর্ম এসেছে নানা উদ্দেশ্য ও রাজনীতি নিয়ে। ধর্মের এপিঠ ওপিঠ দেখানো হয়েছে বলিউডে। বলিউডে এসব সিনেমা হয়েছে আলোচিত, পড়েছে বাধার মুখে। পেয়েছে সফলতাও। ভাবিয়েছে হয়তো দর্শকদের। নানা ছবিতে এসেছে ধর্ম। দেখা যাক, কোন ছবিতে ধর্মকে কিভাবে দেখানো হয়েছে।

এ ধরায় সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘পিকে’। ছবিতে পিকে নামক এক ভিনগ্রহবাসী মানুষের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের মোল্লা, পুরোহিতদের সংঘাতকে দেখানো হয়েছে। যেখানে যুক্তিবাদী পিকের জয় হয়। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৃষ্ট রং নাম্বার পিকে উন্মোচিত করলে, একটি প্রেমকে আমরা পুনরুদ্ধার হতে দেখি। পিকে ধর্ম নয় ধর্মের নামে ফন্দি-ফিকিরের বিরুদ্ধে তৈরী হয়েছে। হিন্দু মুসলিম দুই ধর্ম নিয়ে মানুষের ব্যবসা, তা নিয়ে সিনেমা। এ ধারার আরেকটি সিনেমা ‘ওহ মাই গড’। ‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমায় শাহরুখ খান রেজওয়ান খানের চরিত্রে অভিনয় করেন। যিনি মুসলমান ও আমেরিকায় বাস করেন। প্রেমের সিনেমা হলেও দিয়েছে কিছু মেসেজও। সিনেমাটি ৯/১১ হামলার পরের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত হয়েছে। যেখানে নীরিহ মুসলমানরাও কিভাবে সেখানে বসবাস করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

‘আর্থ’ দেশ ভাগের সময়কার চিত্র এই গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দীপা মেহতার পরিচালনায় ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে বন্ধু হয়েও একটা সময় কিভাবে হিন্দু -মুসলমান আলাদা হয়ে যায়। পরিবেশ তাদের শত্রু করে দেয়। ধর্ম কিভাবে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে উঠে, যেখানে বন্ধুর রক্ত তুচ্ছ। এই ছবিতে সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

কলকাতায় রাজ চক্রবর্তী নির্মাণ করেছেন ‘ধর্মযুদ্ধ’ নামে একটি সিনেমা। জাত-পাতের বিচারে ভেদাভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা অজান্তেই মানুষের যাপনের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্মান্ধতার স্বীকার মানুষ। প্রেম-ভালবাসা সবটাই বিচার্য ধর্মের নিরিখে। এর অন্যথা হলে একে অপরের রক্তের পিপাসু হতেও সময় লাগছে কই! এমনই টুকরো বাস্তবের ছবিকে চিত্রনাট্যের রূপ দিয়েছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। এ সময়ে নির্মিত ধর্ম নিয়ে বেশ ভালো একটি সিনেমা।

বাংলাদেশেও নির্মিত হয়েছে ধর্মের ছবি:

প্রয়াত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ সিনেমার কথাই বলা যায়। চলচ্চিত্রের পুরোটা সময় জুড়ে বিভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্নতার মাধ্যমে ধর্মকে হাতিয়ার করার প্রবণতা, এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্ম ও জীবনকে একসাথে করে চলার সরলতা। ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্নতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা চলচ্চিত্রের প্রধান লক্ষ্য হলেও মানসিক বৈপরীত্যের মাঝে দ্বন্দ্বকে যুক্তির ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন চলচ্চিত্রকার। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য দুইটি ঘটনা হলো কাজী সাহেব ও তার ছোট ভাইয়ের পথে দেখা এবং মাদ্রাসার দুই হুজুরের মাঝে হওয়া কথোপকথন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ সিনেমাটির কথাও উল্লেখ করা যায়। ছবি তোলা বা টেলিভিশন দেখা ঠিক না- এক প্রত্যন্ত গ্রামের চেয়ারম্যান এক বয়স্ক মুরুব্বীর এই মুল্যবোধের সঙ্গে একালের অবারিত মিডিয়ার – এই দুই এর সংঘাতকে অনুষঙ্গ করে আবর্তিত হতে চেয়েছে সিনেমার কাহিনী।

তবে ধর্মীয় সংকট নিয়ে প্রেমনির্ভর সিনেমা বেশি নির্মিত হতে থাকে নব্বই দশকের পর থেকে। একে একে যুক্ত হয় অবুঝ দুটি মন, দোলা, প্রেম পিয়াসী, আজ গায়ে হলুদ, প্রেমের তাজমহল, সবার উপরে প্রেম, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, জীবনের চেয়ে দামী, ভুল, এই তো প্রেম, অন্তরজ্বালা, স্বপ্নজাল থেকে সর্বশেষ ফাগুন হাওয়ায়।

সিনেমাগুলো মূলত প্রেমে ধর্মীয় সংকট দর্শকদের জানাতে নির্মাতারা বানিয়েছেন। ভারতে দুইপক্ষীয় দেখালেও আমাদের দেশের নির্মাতারা সব সময় একপক্ষীয় থেকে গেছেন কিংবা বলা যায় সেভাবে ঝুঁকি নিতে চাননি।

যেমন; প্রায় প্রতিটি ছবিতেই নায়ক মুসলিম থাকেন,এবং নায়িকাকে অন্য ধর্মের। আবার নায়িকার ধর্মেই খল চরিত্রগুলোর ছড়াছড়ি। পুরো ছবিতে দেখিয়েছেন মানব ধর্মই আসল ধর্ম, নায়ক- নায়িকারা রক্ত বের করে মিলিয়ে দিয়েছেন। তবুও শেষে তাদের সফল পরিণতি ঘটাননি।

ডকুমেন্টরি- সিরিজ

ইসলাম ধর্ম নিয়ে অসংখ্য ডকুমেন্টরি নির্মাণ হয়েছে। বিভিন্ন দেশে টেলিভিশন সিরিয়াল নির্মাণ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ম নিয়ে নির্মিত সিরিয়ালগুলোর বেশ কদর রয়েছে। এসব সিনেমা অন্যান্য দেশে ডাবিং করে বিপুল অর্থও আয় করা হয়। সিরিয়ালগুলো নির্মাণও হয় অনেক বড় বাজেটে। এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু এবং সংলাপের মধ্যে ইসলামী ভাবধারা এবং মুসলমান শাসকদের ইতিহাসের কিছু বিষয় আছে। মধ্যপ্রাচ্যে তো মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে আর বাংলাদেশেরও অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য তারা বোধ করে। সেটা থেকে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়।

বেসরকারি দীপ্ত টিভিতে ‘সুলতান সুলেমান’ নামে তুরস্কের একটি ধারাবাহিক প্রচার হয়। তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাহিনী অবলম্বনে এটি তৈরি হয়। সেটির দর্শকপ্রিয়তা দেখে আরো কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এ ধরনের বাংলায় ডাবিং করা সিরিয়াল প্রচার করতে শুরু করে। যা নিয়ে দেশে বেশ আলোচনা সমালোচনাও হয়েছিল।

উল্লেখযোগ্য ডকুমেন্টরি- ‘অ্যামং দ্যা বিলিভারস’, ‘ইনসাইডা ইসলাম- হিস্টোরি চ্যানেল ২০০২’, ‘ইনসাইড মক্কা’, ‘লেটস ডিসকোভার ইদ উল আযহা’, ‘ওয়ান ডে ইন দ্যা হেরাম- অন দ্যা  গ্রান্ড মস্ক’, ‘ইসলাম: এম্পায়ার অব ফেইথ- ন্যারেটেড স্যার বেন কিংসলে’, ‘অ্যান ইসলামিক হিস্টোরি অব ইউরোপ- বিবিসি,২০০৫’, ‘সাইন্স অ্যান্ড ইসলাম- বিবিসি ২০০৯’।

এই সময়ে নেটফ্লিক্সের ‘মাসিহ’ সিরিজটি বেশ আলোচনায় আছে। ওয়েব সিরিজের গল্পটি আবর্তিত হয়েছে একজন খৃস্টান ব্যক্তিকে ঘিরে; যে বিভিন্ন অলৌকিক কাণ্ড করে দেখায়। কিন্তু ব্যক্তিটির আচার-আচরণ, মনোভাব-কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় দাজ্জাল। ইসলামি ধর্মানুসারে, খৃস্টানদের থিওলজির আলোকে দাজ্জালের অনেক লক্ষণ তার মধ্যে স্পষ্ট। অথচ সিরিজটিতে ভণ্ড, প্রতারক এই ব্যক্তিটিকে মাসিহ বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। মাসিহ বলা হয় ঈসা আলাইহিস সালামকে, যিনি শেষ নবির উম্মত হয়ে আবার পৃথিবীতে আসবেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password