সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিন গলিতে খুঁজে ফেরা লকডাউন

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিন গলিতে খুঁজে ফেরা লকডাউন
MostPlay

দেশে করোনাভাইরাসের ব‌্যাপক বিস্তারে সরকার সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করে সন্ধ‌্যার পর জনসমাগম নিষিদ্ধ করলেও তা না মেনে রাজধানীর অলিতেগলিতে চলছে আড্ডা। স্বাস্থ‌্যবিধি মানছে না, মাস্ক পড়ছে না উল্টো গলির চায়ের কাপে ঝড় তুলে করোনাকে নিয়ে চলছে উপহাস। পরিস্থিতি এমন যে লকডাউনকে খুঁজতে হবে রাজধানীর অলিতে গলিতে। সেখানে লকডাউন যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো শব্দ।   

করোনা আমাগো গরীব মানুষগো কিছুই করতি পারবি না নে মামা। আমাগো করোনা ভয় পায়। বুজঝেন না, বলছিলেন দিনমজুর বদরুল আলী। রাজধানীর বনশ্রীতে একটি চায়ের দোকানে বসে এমনই কথা বলছিলেন তিনি।

বাসাবাড়ি বদলের কাজ করা বদরুলের মতো অল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর ব‌্যক্তিরা সরকারের ব‌্যাপক প্রচার-প্রচারনার পরও করোনা নিয়ে এমন মন্তব‌্য করতেই পারেন। তবে করোনা নিয়ে এমন উদাসীনতা শুধু বদরুলের মতো দিনমজুরদের নয়, শিক্ষিত চাকুরিজীবি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ‌্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেটিও লকডাউনের মধ‌্যে স্বাস্থ‌্য বিধি না মেনে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার বিস্তার নিয়ে তাদের ভাষ‌্য, এগুলো কিছু না। করোনা হইলে কিছু হয় না।

সন্ধ‌্যার পর ছেলেকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আয়নাল হোসেন। কথা প্রসঙ্গে বের হওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিন্তা করেছি সন্ধ‌্যার পর অলিতে গলিতে লোকজন কম থাকবে। তাই একটু হাটতে বের হয়েছি। এখন দেখছি ভালোই লোকজন আছে। আসলে এখণ আর লকডাউন কেউ মানতে চায় না।

লকডাউনের মধ‌্যে দোকানে কেনাবেচা এবং স্বাস্থ‌্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে চায়ের দোকানদার আবুল কাশেম বলেন, দোকান না খুললে খাবো কি? খাবার কি কেউ দিয়ে যাবে? করোনার বিস্তারের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও তিনি বলেন, আমাদের করোনা-টরোনা কিছু করতে পারবে না। গরীবের করোনা হয় না।

সোমবার থেকে সারাদেশে সাতদিনের লকডাউন দিয়েছে সরকার। প্রথম দিনে সন্ধ‌্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন অলিতে গলিতে দেখা গেছে চিরচেনা সেই আড্ডা। প্রয়োজন নেই তবুও ঘর থেকে বের হয়েছেন মানুষ। দোকানে দোকানে আড্ডা দিয়েছেন। হোটেলে বসে খাওয়া নিষেধ থাকলেও গলির হোটেলগুলো তা মানছে না। হোটেলে বসেই চা-সিংগাড়া আর চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে। তবে লকডাউনের পুরুষদের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি অনেক কম দেখা দেছে।

প্রায় সব ধরনের দোকানপাটই ছিলো খোলা। বরাবরের মতো ভাসমান বিভিন্ন আইটেম বিক্রির ভ‌্যানগুলোরও দেখা মেলেছে গলিতে। তবে প্রধান সড়কগুলোতে লকডাউনের কার্যকর প্রভাব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়লেও অলিতেগলিতে তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। সেখানে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের দেখা মেলেনি।    

দেশে লকডাউন চলছে, সেটি নিয়েও আছে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি। কেউ কেউ বলেছেন, লকডাউন শুধু মেইন রোডে। কেউ বলছেন, লকডাউন শুধু দিনের বেলায়।  তাদের সরকারি প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে মনে করিয়ে দিতে তারা বলেন, দরকার হলে ঘর থেকে বের হতে সমস‌্যা নাই। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বললেন, এই লকডাউন আগের মতো কড়াকড়ি নাই।

এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে প্রধান সড়কের মতেো অলিতেগলিতে আরো কড়াকড়ি আরোপ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টহলের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password