করোনায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে পৃথিবী

করোনায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে পৃথিবী
MostPlay

মরণঘাতী মহামারী করেনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যার কারণে হু হু করে কমছে বায়ুমণ্ডলে দূষণের মাত্রা। সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত  চীন, ইটালি বা ব্রিটেনের মতো দেশের আকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে কমছে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা। নিউইয়র্কের আকাশে দূষণের মাত্রা কমেছে অর্ধশত ভাগ ।

যার কারণে দল বেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। ফিরে আসছে সমুদ্রের গভীরে চলে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক। তারা ফিরে আসবে মানুষের কাছে প্রতিটি সমুদ্র সৈকতে। ভেনিস থেকে মুম্বাই সর্বত্র রাশ পড়েছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারে । কি অবিশ্বাস্য তাই না?

যত মানুষ সেঁধিয়ে যাবে ঘরে, বন্ধ হতে থাকবে মাঝারি ও বড় শিল্প, কমবে যানবাহন ও বিমানের জ্বালানি দূষণ।  কমে আসবে শব্দ দূষণ ।  পরিসংখ্যান বলছে শুধু চীনেই গত দু’মাসে জ্বালানির ব্যবহার কমেছে শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি। পুরো মানবসভ্যতাকে মাত্র সাত-আট সপ্তাহে কেউ যেন প্রবল ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিয়েছে । ভাবা যায়?

গবেষকদের মতে এত সবে শুরু! তারা সন্দেহ করছে এই ভাইরাস গোটা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দেবে। পাল্টে দেবে আমাদের মানসিকতা, আমাদের জীবনযাত্রা। সীমান্ত মুছে গিয়ে গোটা পৃথিবী দাঁড়াবে এক আকাশের নীচে, অজানা অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে একজোট হয়ে। ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া প্রাথমিক ধাক্কাটুকু সামলে হাত বাড়িয়ে দেবে প্রতিবেশির দিকে।

করোনাঢেউ স্রেফ এই এক-দু’মাসের গল্প নয়। একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে বাজারে আসতে সময় নেবে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস। এরমধ্যে পৃথিবীর অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হবে দফায় দফায়। যতদিন ভ্যাকসিন না আসছে, করোনায় ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার একমাত্র পথ এতে আক্রান্ত হওয়া।

WHO’র মতে এখনও ভারতসহ বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেই মাস-টেস্টিং শুরু হয়নি। কেবল সন্দেহভাজন উপসর্গ দেখলেই টেস্ট হচ্ছে। মজা হল এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর উপসর্গ দেখা দিতে সময় নিচ্ছে ৭-১০ দিন। ততদিন ধরে ওই ধারক বা বাহক জানতেই পারছেন না যে তার শরীরে ভাইরাস আছে অথচ নিজের অজান্তেই তিনি সেই ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন আরো ১০০ মানুষের শরীরে। তাহলে কী দাঁড়ালো? আক্রান্তের যে ছবি বা পরিসংখান আমাদের সামনে এই মুহূর্তে আছে, সে ভারতের হোক বা পৃথিবীর, আসল সংখ্যাটা হয়ত তার বহুগুণ বেশি!

এই পৃথিবীরও যে একটা ইমিউনিটি সিস্টেম আছে, তা ভাবিনি কখনো! মনে হচ্ছে যেন তিক্তবিরক্ত ধরণী আর সইতে না পেরে সেই বোতামটাই টিপে দিয়েছেন! বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী একবছরে করোনা-বিপর্যস্ত মানুষ, দফায় দফায় ঘরবন্দী থাকা মানুষ পৃথিবীর দূষণ কমিয়ে ফেলবে শতকরা ৪০ ভাগের মতো ! যার কারণে পরিবেশ ফিরে যাবে ৫শ’ বছর আগে, বিশুদ্ধতার নিরিখে। মাস ছয়েকের মধ্যে কমতে থাকবে হিমবাহের গলন, হয়তো  বন্ধ হয়ে যাবে বছরখানেকের মধ্যে।

নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ, আক্রান্ত প্রতিটি দেশের ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধতে। ধূলো-ধোঁয়া-অন্ধকার পেরিয়ে সেই নতুন পৃথিবীর সোনালী আলোর রেখা হয়ত দেখা যাচ্ছে এখন থেকেই। কিন্তু এর জন্য চরম মূল্যও দিতে হবে । যদি এমনটা হয় তাহলে এই করোনাকে পুঁজি করেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে পৃথিবী।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password