স্ট্রেস নয়, সচেতনতা হোক সঙ্গী: পেশাজীবনের ভয়াবহ মহাশত্রু ‘জবস্ট্রেস’ মোকাবেলায় করণীয় কী?
স্ট্রেস—একটি ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এর প্রভাব বিশাল। পেশাজীবনে এই শব্দটির উপস্থিতি এতটাই প্রবল যে অনেক সময় মনে হয়, যেন স্ট্রেস আর চাকরি সমার্থক হয়ে গেছে! অথচ বাস্তবে প্রতিটি চ্যালেঞ্জই স্ট্রেস নয়, আবার প্রতিটি স্ট্রেসও চ্যালেঞ্জ নয়। কর্মক্ষেত্রের যে মানসিক চাপ আমাদের ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়—তা-ই হল ভয়ঙ্কর ‘জবস্ট্রেস’।
জবস্ট্রেস আসলে কী?
জবস্ট্রেস হলো এক ধরণের শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা তখনই সৃষ্টি হয় যখন কর্মীর ওপর দায়িত্বের চাপ তার সক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায় এবং তিনি পর্যাপ্ত সহায়তা পান না। চাপ যত বেশি, কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কাও ততটাই, যার ফলে জন্ম নেয় হতাশা, উদ্বেগ, অবসাদ এবং নানাবিধ শারীরিক-মানসিক জটিলতা।
জবস্ট্রেস: নীরব ঘাতক কেন?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা যায়—যেসব তরুণ কর্মজীবনের শুরুতেই উচ্চ মাত্রার স্ট্রেসের সম্মুখীন হন, তারা ভবিষ্যতে অবসাদ, দুশ্চিন্তা এবং ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। শুধু মানসিক নয়, এই স্ট্রেস দেহেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। কর্টিসোল নামে একটি স্ট্রেস হরমোন অতিমাত্রায় নিঃসৃত হলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো—স্ট্রেস শুধু ব্যক্তিকেই নয়, প্রজন্মও প্রভাবিত করে! গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদি জবস্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্তানরাও মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
জবস্ট্রেস থেকে বাঁচতে কী করবেন?
✅ ১. কাজে আনন্দ খুঁজুন: বিরক্তি নিয়ে কাজ করলে সেটি চাপ হয়ে ওঠে। বরং কাজে অর্থ খুঁজে নিন—নিজের লক্ষ্য বা প্রিয়তাকে কাজে জুড়ে দিন। তখন কাজ হবে আনন্দের উৎস।
✅ ২. সমস্যা নয়, সমাধান ভাবুন: যে-কোনো চ্যালেঞ্জকে সমস্যা নয়, বরং শেখার ও সমাধান খোঁজার সুযোগ হিসেবে দেখুন। এতে চাপ কমবে, মনোযোগ ও আগ্রহ বাড়বে।
✅ ৩. স্ট্রেস নয়, চ্যালেঞ্জ ভাবুন: পশ্চিমে একটি কথা প্রচলিত—"Stress should be a driving force, not an obstacle." চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ গ্রহণ করলে স্ট্রেস ‘পজিটিভ এনার্জি’ হয়ে ওঠে।
✅ ৪. মনোযোগ বাড়ান, ‘মাইন্ডফুল’ হোন: যখন আপনি ‘এখন এবং এখান’–এই মুহূর্তে মনোযোগী থাকবেন, তখন চাপ কমে যাবে। অতীত-ভবিষ্যৎ নয়, কাজে মন দিন। একে বলে Mindfulness।
✅ ৫. জীবনাচার ঠিক রাখুন: সুষম আহার, ঘুম, ব্যায়াম এবং ভালো মানুষের সংস্পর্শ—এই চারটি অভ্যাস আপনাকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখবে, স্ট্রেসকে দূরে রাখবে।
✅ ৬. নিয়মিত সালাত পড়ুন: সালাত শুধু স্ট্রেস কমায় না, মানসিক দৃঢ়তাও বহুগুণ বাড়ায়। প্রতিদিন নিয়ম করে সালাত পড়লে মন শান্ত ও স্থির থাকে।
                                                                           
                                                                    
                                    
জবস্ট্রেসকে দূর করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব—এই আত্মবিশ্বাসই প্রথম অস্ত্র। আধুনিক কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য শুধু দক্ষতা নয়, প্রয়োজন ‘মেন্টাল ফিটনেস’। আর সেই ফিটনেস গড়ে তোলে সচেতনতা, জীবনাচার আর নিজের প্রতি যত্ন। স্ট্রেসকে পরাজিত করতে চাইলে, আগে নিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।
                                                                           
                                                                    
                                    
                                                                                                                                                   
                                                                
                                        
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন