কাউকে কষ্ট দেয়া ইসলামে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। আমাদের সমাজে অনেকে আছেন যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে মানুষককে কষ্ট দিয়ে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, আভাবে পড়ে কেউ যদি কারাও কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, তবে সে যদি যথাসময়ে তা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে ওই ঋণগ্রস্ত মানুষের ওপর নানা রকম হয়রানি বা জুলুম নির্য়াতনের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়। একজন সত্যিকার মুসলমান কাউকে কষ্ট দিতে পারে না এবং কারাও মন:কষ্টের কারণও হতে পারে না। কারাও অন্তরে ব্যথ্যা দেয়া, কারাও চোখে অশ্রু ঝরানো বিরাট পাপের কাজ।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা মোমিন পুরুষ ও নারীদের বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ [সূরা: আহজাব: ৫৮]। কাউকে কষ্ট দিলে ইমান থাকে না। তা সত্বেও জেনেই হোক আর না জেনেই হোক ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক আমরা মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকি। মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা, ও ওয়াদা ভঙ্গ, গিবত, পরশ্রীকাতরতা, গাল-মন্দসহ আমরা এমন সব কথা বলি যা ওপরের মনকষ্ট বা দু:খের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্তর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়-চোখের অশ্রুতে বুক ভেসে যায়। নিজের রাগ অভিমান, ক্ষোভে আমরা অন্যের ওপর এমনভাবে প্রয়োগ করি যে, তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত করে।
মহানবী (সা:) ইমানদার লোকদের এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (সা:) বলেন ‘যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে ব্যাক্তি যেনো তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেনো মেহমানদের সম্মান করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে সে যেনো ভালো কথা বলে নইলে চুপ থাকে’ [মুসলিম]।
হজরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা:) তাঁর সাহবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা কী জানো সবচেয়ে বড় সুদ কী? সাহবিরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন রাসূল (সা:) বললেন, কোনো মুসলমানের সম্মানহানি ও অপদস্ত করাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় সুদ [শুয়াবুল তাফসির দ্রষ্টব্য]: একজন প্রকৃত ইমানদার কখনো কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। হাদিসের পরিভাষায় ‘সেই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে ওপর মুসলমান নিরাপদ থাকে’ বোখারি: ১০,আহমদ। ৬৫১৫, নাসায়ি:৪৯১০]।
একদা মহানবী (সা:) বললেন, ‘আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি প্রকৃত মোমিন হতে পারে না। এভাবে তিনি তিনবার বললেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো , হে আল্লাহর রাসূল (সা:) সে ব্যাক্তি কে? রাসূল (সা:) প্রত্যুওরে বললেন, যার অনিষ্টতা থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। [বোখারি মুসলিম:৪৬ আহমদ:২৮৮]। আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করেও কেই যদি প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয় তবে সে জান্নাতের আশা করতে পারে না। হাদিসে এসছে ‘এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহ রাসূল (সা:) অমুক মহিলা বেশি বেশি নামাজ রোজা এবং দান-সদকা করে কিন্তুু সে তার প্রতিবেশীকে তিরস্কার করে এবং কষ্ট দেয়।
রাসূল (সা:) বললেন, এমন মহিলা জাহান্নামে যাবে। লোকটা আবার বললেন, অমুক মহিলা নামাজ, রোজা এবং দান-সদকা কম করে, তবে সে তার প্রতিবেশীকে গালিগালাজ করে না এবং কষ্ট দেয় না। রাসূল (সা:) বললেন সে মহিলা জান্নাতে যাবে। [মুনাদে আহমদ: ২/৪৪০: মুসদারাক হাকেম: ৪/১৬৬]। পরিবেশ দূষিত হলে রোগব্যধি ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক হয়রানির মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।
নিরীহ ও নির্দোষ মানুষদের বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। গ্রেফতাকৃত ব্যক্তির ওপর জুলুম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর ফলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ও তার পরিবার দু:খ কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমে ও পত্র পত্রিকার মাধ্যমে এসব খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরণের কাজ বড় অন্যায় এবং ইসলাম কখনো এ জাতীয় কাজকে সমর্থন করে না। মহানবী (সা:) বলেছেন, তোমরা দু’টি অভিশপ্ত কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, সে দু’টি কাজ কী? রাসূল (সা:) বললেন, জনগণের চলাচলের রাস্তার কিংবা ছায়ায় প্রসাব-পায়খানা করা।
মোট কথা মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। কাউকে কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা ইসলাম চরম শত্রুর সাথেও অবস্থাবুঝে মোহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার উৎসাহ জুগিয়েছে।
আবু লাহাবের স্ত্রী মহানবী (সা:) যে পথ দিয়ে চলাচল করতেন সে পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো অথচ তার অসুস্থতার সময় মহানবী (সা:) তার সেবা করেছিলেন। তাই আসুন আমরা প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা যেনো কারও কষ্ট না দিই এবং কষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়াই, মহান আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন