গিলে খেল পীরগাছার দক্ষিণ গাবুড়া গ্রাম

গিলে খেল পীরগাছার দক্ষিণ গাবুড়া গ্রাম

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামটি মানচিত্রে থাকলেও এখন আর দৃশ্যমান নেই। তিস্তা নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামটি। আজ বুধবার দুপুরে গ্রামের শেষ বাড়িটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

গত এক সপ্তাহের ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় অসহায় পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। এখন নদীভাঙন পাশের হাগুরিয়া হাশিম গ্রামের ঘাড়ে ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদী বেশ শান্ত। ঢেউ নেই, তবে রয়েছে তীব্র স্রোত। আর স্রোতের সঙ্গে ভাঙছে পাড়, জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনের কবলে পড়েছে দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের আজিম উদ্দিনের শেষ বাড়িটি। আজিম উদ্দিন তার ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত। ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে পাশের একটি খোলা মাঠে রাখছেন। তার ছেলে বাড়ির উঠানে থাকা একটি আমগাছ কেটে সরাচ্ছেন। পাশের গ্রাম থেকে লোকজন ডেকে এনে ঘর ভেঙে নৌকায় তুলছেন মাঝ নদীতে জেগে ওঠা চরে নিয়ে যেতে।

বাড়ির নারীরা ঘরের বেড়া সরাচ্ছেন। কেউ কেউ ঘরের বেড়া মাথায় করে নৌকায় তুলছেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাচ্ছে। কোথাও ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ গাবুড়া (মাঠের হাট) গ্রামটি তিন বছর আগে ভাঙনের কবলে পড়ে। ওই গ্রামে পাঁচশতাধিক পরিবারের বসতি ছিল। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত ছিল গ্রামটি। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। এ ছাড়া তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের আগে চারটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

ছাওলা ইউনিয়নের পূর্ব শিবদেব চর, আমিন পাড়া, বৈরাগীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পাকা মসজিদ, হাটবাজার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শত শত একর আবাদি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। বাড়িঘর হারিয়ে ভাঙনের শিকার ব্যক্তিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গরু-ছাগল নিয়ে বসবাসের জন্য একটু ঠাঁই খুঁজতে তারা এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। অনেকের খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিবছর তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ছে গ্রামগুলো।

আজিম উদ্দিন জানান, প্রায় এক মাস ধরে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। গৃহহারা হয়েছে কয়েক’শ পরিবার। এখন খেয়ে না-খেয়ে কোনো রকমে জীবন পার করছেন।

আজগার আলী মিস্ত্রী বলেন, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। বর্তমানে আমরা নিঃস্ব। প্রতিবছরই নদী ভাঙছে, তারপরও ভাঙনরোধে সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিল না। বাধ্য হয়ে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে আবারও বসতি গড়তেছি। আমরা জানি আবারও নিশ্চিত ভাঙনের কবলে পড়ব।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, চলতি ভাঙনে দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামে বেশকিছু পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। আমরা দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামটি নদী ভাঙনকবলিত এলাকা। এখন সর্বত্রই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু এলাকায় কাজ শুরু করেছি। তবে ওই এলাকার ভাঙনরোধে বরাদ্দের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password