হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করেন স্কুলছাত্রী

হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করেন স্কুলছাত্রী

নওগাঁর মান্দায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর দু’ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের ক্ষোভে ওই স্কুলছাত্রী কামরুন নাহার হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ১১দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকালে তিনি মারা যান।নিহত স্কুলছাত্রী কামরুন নাহার গ্রামের দিনমজুর শামছুর রহমান প্রামাণিকের মেয়ে এবং কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর অভিযুক্ত যুবক মুখলেছুর রহমান একই গ্রামের শফির তালুকদারের ছেলে। তিনি একজন উদ্যোক্তা।

গত ৬ ডিসেম্বর উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের কাঁশোপাড়া গ্রামে বাড়িতে সকাল ১০টার দিকে হারপিক পান করেন ওই স্কুলছাত্রী।নিহত পরিবার ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, স্কুলছাত্রী কামরুন নাহারের ভাই আব্দুল মালেককে চাকরি দেয়ার কথা বলে মুখলেছুর রহমান গত ৬ থেকে ৭ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা নেন। এরপর থেকে মুখলেছুর রহমান তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করে।

কামরুন নাহার স্কুলে প্রাইভেট পড়তে যেতো নিয়মিতভাবে। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় কোচিংয়ের জন্য মুখলেছুর রহমান সাইকেলে করে তাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতেন। তখন তাদের দুজনের মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। অন্যদিকে মুখলেছুর রহমান বিবাহিত এবং এক সন্তানের বাবা।

গত ১ অক্টোবর প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর কামরুন নাহারকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় মুখলেছুর রহমান। মেয়ের পরিবারের লোকজন পাঁচদিন পর উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। এরপর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল নিয়মিতভাবে। 

এক পর্যায়ে ক্ষোভের বসে গত ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে কামরুন নাহার হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন সেখানে ১১দিন পর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার পর থেকে মুখলেছুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

নিহতের বাবার অভিযোগ, আমার সন্তানকে চাকরি দিবে বলে মুখলেছুর রহমান ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর থেকে সে আমার বাড়িতে আসা যাওয়ার মাঝে যে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। শুনছি সে নাকি আমার মেয়েকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে বিয়ে করেছে। মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে তার সর্বনাশ করেছে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

মুখলেছুর রহমানের স্ত্রী জহুরা খাতুন বলেন, পরকীয়ার বিষয়টি জানার পর আমি নিজেও হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, মেয়ের বাবা অভিযোগ করেছিলেন  মুখলেছুর রহমান তার মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু বাড়িতে তুলছে না।এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘর ওই উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ ছিল। সে ঘরে সবাই যেত। কখন অনৈতিক কাজ হয়েছে সেটা তো আমি বলতে পারব না।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, মেয়ের বাবা বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) মুখলেছুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেছেন। রাজশাহীতে মারা যাওয়ায় সেখানে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password