বাংলাদেশের চাপ কাটিয়ে ওঠার দিন আজ

বাংলাদেশের চাপ কাটিয়ে ওঠার দিন আজ

পাল্লেকেলে টেস্টে ৫৪১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার তৃপ্তি এখন মমিনুল হকদের কাছে যেন সুদূর অতীত! দিমুথ করুণারত্নে আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার রেকর্ড জুটিতে জয়ের আশা ক্যান্ডির আকাশে মিশে গিয়ে এখন উল্টো উঁকি দিচ্ছে অজানা আশঙ্কাও। ড্র ছাড়া দ্বিতীয় যে সম্ভাবনা টিমটিম করে জ্বলছে সেটি যে বাংলাদেশের হারের!

করুণারত্নে আর ধনঞ্জয়ার রেকর্ড ৩২২ রানের জুটির ব্যাটেই ক্ষীণ সেই সম্ভাবনা জ্বলছে। গতকালের খেলা শেষে সফরকারীদের চেয়ে মাত্র ২৯ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। আর উইকেট চতুর্থ দিনে এসেও যেমন ব্যাটিং স্বর্গ হয়ে আছে, তাতে চটজলদি স্বাস্থ্যবান লিড নিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে লঙ্কানরা। দলটির কোচ মিকি আর্থার তেমন হুংকারই দিয়েছেন গতকাল। অন্তত হারের ভয় তো আর নেই লঙ্কানদের।

মিকি আর্থারের ছকটা পরিষ্কার। দ্রুত রান তুলে যদি শেষ তিন ঘণ্টায় দুই শর কাছাকাছি রান চাপিয়ে দেওয়া যায় প্রতিপক্ষের ওপর। কুশলী এ কোচ জানেন, উইকেট এখনো খুবই ফ্ল্যাট। কিন্তু চাপ বলে একটা মজার বিষয় আছে। যদি পর্যাপ্ত রান আর সময় হাতে পাই, কে জানে কী ঘটতে যাচ্ছে!

চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়া তাসকিন আহমেদ তাই একটা লক্ষ্যের কথাই বলেছেন, এই টেস্ট ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই উইকেটে আসলে আমাদের ধৈর্য নিয়ে ভালো জায়গায় বোলিং করা ছাড়া উপায় নেই।

ভালো জায়গায় বল ফেলেও পাল্লেকেলের উইকেটে ফায়দা পাচ্ছেন না বোলাররা। ক্রিকেটের টার্মিওনলজিতে এ ধরনের উইকেটকে বলা হয় রানওয়ে কিংবা হাইওয়ে। ব্যাটসম্যানদের জন্য মসৃণ আর কি, সেটাই বোঝায়। নইলে চতুর্থ দিনের উইকেটেও বোলারদের জন্য কোনো সাহায্য থাকবে না, তা হয় নাকি! মিকি আর্থার নিজেও চমকে গেছেন উইকেটের এমন একতরফা ব্যবহার দেখে, পাল্লেকেলেতে এই প্রথম আমি টেস্ট দেখছি। ভেবেছিলাম বাংলাদেশকে পেস আর সুইং দিয়ে ভড়কে দেব; কিন্তু আমার পরিকল্পনা কাজে দেয়নি। একেবারে ফ্ল্যাট উইকেট এটা।

তাই প্রতিপক্ষকে ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে দেখেও বিচলিত হয়নি শ্রীলঙ্কা। দিমুথ করুণারত্নের ব্যাটিং মানসিকতা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই শিক্ষণীয় হতে পারে। ভাবা যায়, একজন ক্রিকেটার ক্যান্ডির গরমেও টানা চার দিন মাঠে অবিচল কাটিয়ে দিয়েছেন! প্রথম দুই দিন ফিল্ডিংয়ের পরের দুই দিন ব্যাট করে চলেছেন। এর মধ্যে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। স্বাগতিকদের ম্যাচ পরিকল্পনার ছকে অধিনায়কের ট্রিপল সেঞ্চুরির জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ থাকবে। অন্তত আজ প্রথম সেশনে তো আর ইনিংস ঘোষণা করছে না শ্রীলঙ্কা। রানও দ্রুত করার পরিকল্পনা যখন রয়েছে, তখন তিন শর ম্যাজিক্যাল ফিগার থেকে মাত্র ৬৬ রান দূরে করুণারত্নে। সঙ্গী ধনঞ্জয়ার সামনেও প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি। ব্যাটিং স্বর্গে সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বাকি ৪৬ রান করার জন্য নিশ্চিত ছুটবেন তিনি।

অন্যদিকে উইকেটহীন একটি দিন কাটিয়ে আজ শেষ দিনে বাংলাদেশ নামছে সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যে, ড্র। স্বাগতিকদের দ্রুত রান তোলার মিশন ভণ্ডুল করার একটাই উপায়, রক্ষণাত্মক বোলিং ও ফিল্ডিং। কিন্তু সেটি করার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি অবশেষ আছে তো দলে? তাসকিন আহমেদ আশ্বাস দিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা তো পাল্লেকেলের উইকেট। চার দিনে ১০ উইকেট পড়েছে যে উইকেটে, সেই ২২ গজে দু-তিন ঘণ্টায় একটি দলকে অল আউট করার পক্ষে পর্যাপ্ত যুক্তি নেই।

অবশ্য মিকি আর্থারের বলা চাপ যদি পিষ্ট করে তামিম ইকবালদের, তবে ভিন্ন কথা। গত চার দিনে শরীরী ভাষায় আশা জাগানো বাংলাদেশের সামনে শেষ দিনের সেরা ফল হবে সেই চাপকে জয় করা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password