হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ দিন থেকেই পুণ্যলগ্ন শুরু দেবীপক্ষের।
‘মহালয়া’ কথাটি এসেছে
মহালয় থেকে। মহালয়ের অর্থ পরমাত্মা। বৃহৎ আলয়। পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার সীমানা
ডিঙিয়ে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনকে প্রত্যক্ষ করি, তখনই সেই মহালগ্নটি আমাদের
জীবনে মহালয়ার বার্তা বহন করে আনে।
এক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই
হচ্ছেন সেই মহান আশ্রয়, তাই উত্তরণের লগ্নটির নাম মহালয়া। একটি অর্থ অনুসারে মহান আলয়টি
হচ্ছে পিতৃলোক। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যা তাকে
মহালয়া হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। পিতৃপূজা
ও মাতৃপূজার মাধ্যমে এই দিনটিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহান করে তোলে বলেই এই
পূণ্যলগ্নটিকে মহালয়া বলা হয়।
হিন্দু ধর্মমতে, শ্রী
শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই
আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো
এই মহালয়া। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন
গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান
করা হয়।
ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা
শুরু হলেও মূলত মহালয়ার দিন থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমণ ধ্বনি শুনতে পাবেন।
দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়।
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া
অসীম শক্তির উৎস।
পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে,
দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও
মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে
বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব
ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে ‘মহামায়া’ এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি
অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা নয় দিনব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও
হত্যা করে।
মহালয়ার আর একটি দিক
হচ্ছে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে তাদের
আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের
মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে
মহালয়া। পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন