সাতকানিয়ায় চেয়ারম্যান হত্যা, নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

সাতকানিয়ায় চেয়ারম্যান হত্যা, নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক (৯০) হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নিজেদের হেফাজতে থাকা বাড়ির কেয়ারটেকার জমির উদ্দিনকে (২৭) জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ।

নিহত আবদুল হক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিও ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ওই পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।

সাতকানিয়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতের খাবার খাওয়ার পর আবদুল হক নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার (১ মার্চ) সকাল নয়টার দিকে বাড়ির গৃহপরিচারিকা ও প্রহরী গিয়ে দেখেন আবদুল হক তখনো ঘুম থেকে উঠেননি। তারা ডাকাডাকি করেও গৃহকর্তার সাড়া না পেয়ে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় গৃহকর্তাকে খাটের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় আর বাড়ির কেয়ারটেকার জমির উদ্দিনকে মুখ ও দুই পা কাপড় দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান।

সাতকানিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ‘রোববার রাতে যখন ঘটনা ঘটে তখন জমির উদ্দিন নামে একজন কেয়ারটেকার বাড়িতে ছিলেন। ঘটনার দিন সকালে তাকে মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সোমবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, তাতে বিষয়টি জায়গা-জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকার থেকে পাওয়া তথ্য ও ক্রাইম-সিন থেকে উপাত্ত মিলিয়ে ঘটনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না। বিষয়টিতে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আমাদের আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে কেয়ারটেকার জমিরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

সূত্র জানায়, নিহত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের চার ছেলে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় থাকেন। মেয়েরা বিবাহিত। আব্দুল হক ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ও চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে গৃহপরিচারক ও পরিচারিকা আছেন। বর্তমানে তার স্ত্রী চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার রাতে গৃহপরিচারিকা রান্না করে দিয়ে চলে যান। সেদিন রাতে জমির উদ্দিন নামে একজন কেয়ারটেকারকে নিয়ে আবদুল হক রাতে বাড়িতে ছিলেন।

সোমবার সকাল নয়টার দিকে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রহরী ও গৃহপরিচারিকা এসে ডাকাডাকি শুরু করেন। কারো সাড়া না পেয়ে তারা পেছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকেন। দেখেন বাড়ির শোয়ার ঘরে গৃহকর্তা আবদুল হকের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। অন্য কক্ষে গৃহপরিচারক জমির উদ্দিন পা, চোখ ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিলেন। বিছানা ও ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো। পরে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

ওসি (তদন্ত) সুজন সাংবাদিককে কে বলেন,‘নিহত আবদুল হকের মাথার বাম পাশে, বাম চোখ ও বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধারালো ও ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের জানাজা দুপুরে শেষ হয়েছে। বিকেলে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হতে পারে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password