আত্মা শান্তি হয় প্রতিদিন যিকিরের মাধ্যমে
বাতাস ও পানি ছাড়া যেমন প্রাণ বাঁচে না, তেমনই আল্লাহ তায়ালার যিকির ছাড়া প্রকৃত মুমিনের আত্মার শান্তি হয় না।যিকিরের ফযিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন-তোমরা সকলে জেনে রাখ- একমাত্র আল্লাহর যিকির ব্যতীত আত্মার শান্তি আর কিছুতেই নাই। একমাত্র আল্লাহর পবিত্র নামের যিকির জপাতেই আত্মার শান্তি লাভ হয়।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন:
তোমরা আমার যিকির করো (আমাকে স্মরণ রেখো) তা হলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখব।
তাই আল্লাহ পাক বলেছেন:
যারা নম্রতা ও ভক্তি সহকারে আল্লাহর আদেশ পালন করতে থাকে এবং আল্লাহর নাম শ্রবণ করা মাত্রই যাদের প্রাণ কেঁপে উঠে তাদেরকে আপনি সুসংবাদ প্রদান করুন।
আল্লাহ তায়ালা আবার বলছেন:
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর যিকির বেশি করে কর এবং সকাল-বিকাল (দিবা-রাত্র) তার পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাক।
এখানে সহজ কয়েকটি যিকিরের কথা উল্লেখ করা হলো যে যিকিরগুলো পাঠ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দাকে পরকালে জান্নাতে স্থান দিবেন।
* প্রতিদিন ১০০ বার সুবহান আল্লাহ্ পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয়।[সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]
* ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং সর্বোত্তম দোআ’। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,
* ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সর্বোত্তম যিকর। (তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২)
* ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর’ এই কালিমাগুলি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেন- পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চাইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়। ( সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২)
*যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১]
* নবী (সঃ) বলেন- ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহী সুবহানাল্লিল আযীম’ এই কালীমাগুলি জিহ্বায় উচ্চারনে সহজ , মীযানের পাল্লায় ভারী ,দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয় । [সহিহ আল- বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২]
* যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবি হামদিহী’ পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী) খেজুর গাছ রোপন করা হবে । (আত-তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১, সহীহ আত-তিরমিজী-৩/১৬০)
* নবী (সঃ) বলেনঃ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। ( সহীহ আল-বুখারী -১১/২১৩,)
* নবী (সঃ) বলেন- ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ এই কালীমাগুলি হচ্ছে “অবশিষ্ট নেকআ’মল সমুহ” । ( আহমাদ (সহীহ)-৫১৩, মাজমাউজ জাওয়াঈদ-১/২৯৭ )
* নবী (সঃ) বলেন- যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি দশ বার রহমত বরষন করবেন- “আল্লাহুম্মা সাল্লি ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লায়তা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ আল্লাহুম্মা বারিক ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাকতা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। এবং
* মহানবী (সঃ) আরও বলেন- যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে ।” – (তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৭৩)
আল্লাহর যিকির এমন এক শক্তি, যা দুর্বলকে সবল করে এবং সকল বিপদে দৃঢ়পদ রাখে। কারণ আল্লাহর স্মরণকারীর বিশ্বাস এই যে, সব কিছু আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং আল্লাহর কোনো ফয়সালা বান্দার জন্য অশুভ নয়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়ার মাঝেই বান্দার কামিয়াবি ও কল্যাণ। কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি।
কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এর জন্য আলাদা করে বেশি সময় ব্যয় করার কিম্বা অন্যান্য কাজ স্থগিত রাখার প্রয়োজন হয় না।আমরা জানি আল্লাহর পবিত্র নামে যে বরকত ও আনন্দ রয়েছে তা অন্য কিছুতে নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন