ভোট দেয়া একজন নাগরিকের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রবাসীরা দেশের বাইরে থাকলেও তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক এবং দেশের প্রতি তাদের গভীর টান ও দায়িত্ববোধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা, বিশেষত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি স্পষ্ট অশ্রদ্ধা প্রদর্শন।
সম্প্রতি সৈয়দা আসিফ আশরাফী পাপিয়ার একটি ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, যেখানে তিনি প্রবাসীদের প্রবাস থেকে ভোট দেয়া নিয়ে বিরোধিতা করছেন, যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের মন্তব্য প্রবাসীদের প্রতি শুধু অসম্মানজনকই নয়, বরং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দেশের প্রতি তাদের অবদানকেও হেয় প্রতিপন্ন করে। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড়ো অবদানকারীদের মধ্যে অন্যতম। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করে এবং লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করে। এই বিশাল অবদানকে উপেক্ষা করে বা খাটো করে এমন মন্তব্য করা হলে প্রবাসীরা নিজেদের অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত মনে করেন। দেশের বাইরে বসবাস করলেও প্রবাসীরা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের সংকটে তারা এগিয়ে আসেন, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কাজ করেন। তাদের প্রতি এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য প্রকারান্তরে তাদের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ স্বীকৃতি না দেয়ার শামিল।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনে নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে প্রবাসীরা দেশের জন্য কাজ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে দেশেরই একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন তাদের ভোট না দিতে বলেন, তখন তা তাদের মনে গভীর হতাশা ও মানসিক আঘাতের সৃষ্টি করে। এই ধরনের বক্তব্য দেশের নীতিনির্ধারকদের সম্পর্কে প্রবাসীদের মনে ভুল বার্তা দেয়। এটি তাদের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি করতে পারে যে তাদের ভোটের চেয়ে কেবল তাদের পাঠানো অর্থকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, যা দেশের প্রতি তাদের আনুগত্য এবং ভালোবাসার প্রতি প্রশ্ন তোলে। প্রবাসীরা বাংলাদেশের মেরুদণ্ড। তাঁদের অবদান ছাড়া দেশের অর্থনীতি কল্পনা করা কঠিন। তাদের আবেগ, অনুভূতি এবং মতামতকে সম্মান জানানো অত্যন্ত জরুরি। তাদের ক্ষোভ উপেক্ষা করা হলে তা কেবল তাদের মনোবলকেই ভেঙে দেবে না, বরং রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং দেশের প্রতি তাদের সামগ্রিক আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
এ ব্যাপারে ফেসবুক এ আরিফু ইসলাম লিখেছেন, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল" উনি প্রবাসীদেরকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে" যে মন্তব্য করেছে, 'এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই এবং এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা দেখার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আপনারা সময় থাকতে দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটান এ সমস্ত নেতাকর্মীদের জন্য আপনাদের ভোটব্যাংক দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীরা এদেশের সম্পদ এবং সন্তান এদেশের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রবাসীদেরকে ভালোবাসা জায়গায় রাখে প্রবাসীদের কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে শুধু প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয় না এদেশের জনগণের ও শুরু হয়। এবং এক এক জন প্রবাসীর পরিবারের সদস্য সংখ্যাও কম না। সবকিছু বিবেচনায় রাইখেন'। মুহাম্মাদ জনি বিন শাহজাহান ফেসবুক এ মন্তব্য করেছেন, 'এটাই রাজনীতিবিদদের প্রকৃত রূপ। মুখোশ খুলে পড়েছে একজনের মাধ্যমেই। আসলে আমাদেরকে কেউ দেশের নাগরিকই মনে করে না'।
এই পরিস্থিতিতে, সৈয়দা আসিফ আশরাফী পাপিয়ার উচিত অনতিবিলম্বে তার বক্তব্যের জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া এবং প্রবাসীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রবাসীদের উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত এবং তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত ও গঠনমূলক আলোচনা রক্ষা করা এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই অপরিহার্য।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন