‘আমি টাকা চাই না, ধর্ষককে বিয়ে করতে চাই’

‘আমি টাকা চাই না, ধর্ষককে বিয়ে করতে চাই’

নওগাঁয় বিয়ের প্রলোভনে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী (৩০)-কে একাধিক বার ধর্ষণ করেছেন প্রভাবশালী তিন সন্তানের জনক। ঘটনায় তরুণীর মা বাদী হয়ে জাহিদুল ইসলাম (৫১)-এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন।

মামলার পর আসামি গত ৬ মাস থেকে জেল হাজতে আছেন। আপোস করতে অভিযুক্তের পরিবার বুধবার রাতে ওই তরুণীর মাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। জাহিদুল সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। ওই তরুণী উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণীকে বড় মেয়ের কাছে রেখে তার মা ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ১৭ জুলাই রাত ১১টার দিকে তরুণীর বড় বোন ঘরের বাইরে মাছ পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় তরুণীর ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেখেন। পরে তার দুই ছেলেকে নিয়ে তরুণীর ঘরে গিয়ে দেখেন চৌকির নিচে জাহিদুল ইসলাম লুকিয়ে আছেন। পরে তাকে ঘর থেকে বের করে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। জাহিদুল তাকে ছেড়ে দিতে এবং বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করলে রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। 

পরে তরুণীর ভগ্নীপতি বিষয়টি জাহিদুলের বউকে জানান। এরপর তাদের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। ঘটনার ২০-২২ দিন পর তরুণীর পরিবার বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানান জাহিদুল তার ঘরে ঢুকে। তারপর এলাকাবাসীদের মাঝে কানাঘুষা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন গ্রামের মোড়ল থানা পুলিশসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করার কথা বলে অভিযুক্তের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত করে। অবশেষে ঘটনাটি থানা পর্যন্ত গড়ায়। ঘটনায় তরুনীর মা বাদী হয়ে জাহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর জাহিদুল পালিয়ে ছিলেন। অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এদিকে অভিযুক্তের পরিবার থেকে ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে ভুক্তভোগীর পরিবার চাপে পড়ে আপোস করতে বাধ্য হয়। তরুণীর মায়ের হাতে ৫০ হাজার টাকা দেন অভিযুক্তের বড় ছেলে সজ্জল হোসেন কুইন।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, জাহিদুলের বড় বাচ্চা আছে। তারপরও আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আমার ঘরে তিন দিন থেকে গেছে। আমি টাকা চাই না। ধর্ষক জাহিদুলকে বিয়ে করতে চাই।

মামলার বাদী তরুণীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। একই জায়গায় বসবাস করতে হয়। ঝামেলায় আর যেতে চাই না। বিষয়টি সমাধানের জন্য জাহিদুলের ছেলে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এছাড়া বুধবার উকিলের কাছে গিয়ে আপোস নামায় আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, তার মেয়ে আপোস নয় জাহিদুলকে বিয়ে করতে চায়।

জাহিদুল ইসলামের বড় ছেলে সজ্জল হোসেন কুইন বলেন, বিষয়টি নিয়ে মানুষের মুখে গুজব ছড়িয়েছে। সবারই সম্মানের ক্ষতি হয়েছে। ঘটনা সঠিক মনে হচ্ছে না। গুজব বা যাই হোক না কেন, আমরা আপোস করার জন্য ভুক্তভোগীর মায়ের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন বাবার জামিনের অপেক্ষায়।

নওগাঁ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ঘটনা সত্য মনে হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password