অমুসলিমদের দান করলেও সওয়াব মিলে

অমুসলিমদের দান করলেও সওয়াব মিলে

গরিব-দুঃখী মানুষের খোঁজখবর রাখা, দান-সদকা করা সচ্ছল মুসলমানদের একটি প্রধান কর্তব্য। ইসলামে বড় সওয়াবের কাজগুলোর একটি। কুরআনে বহু জায়গায় আল্লাহ সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোথাও কোথাও এ সদকা মানে জাকাত, কোথাও কোথাও এর উদ্দেশ্য নফল সদকা; যার কোনো নির্দিষ্ট সীমা বা পরিমাণ নেই।

জাকাত ইসলামের ফরজ বিধান। পাঁচ রোকনের একটি। প্রতি বছর উদ্বৃত্ত সম্পদের চল্লিশ শতাংশের এক শতাংশ দান করে দেওয়া সচ্ছল মুসলমানদের ওপর ফরজ; কিন্তু শুধু এ পরিমাণ সম্পদ দান করাই যথেষ্ট নয়, সামর্থ্য থাকলে সারা বছরই দান করা উচিত। সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, সদকা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে। সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয়, সদকা মানুষের গোনাহ দূরীভূত করে দেয়।

জাকাত শুধু মুসলমানদের দিতে হবে- এ রকম বাধ্যবাধকতা রয়েছে; কিন্তু নফল সদকা মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষ সবাইকে দেওয়া যায়। অভাবী, অভুক্ত, বিপদগ্রস্ত মানুষ যে ধর্মেরই হোক- তাকে খাবার খাওয়ানো, তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া সওয়াবের কাজ। কিছু আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ চান মুসলমানরা মুসলমানদের দান করার পাশাপাশি অমুসলিম দরিদ্র ও অভাবীদেরও দান করুক।

অমুসলিম অভুক্ত থাকলে বা বিপদে পড়লে তার সাহায্যে এগিয়ে যেতে তাদের মনে দ্বিধা না থাকুক। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার বর্ণনায় সাঈদ ইবনে যুবাইর বলেন, রাসূল (সা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমরা শুধু তোমাদের ধর্মের মানুষের দান কর।

তখন আল্লাহতায়ালা কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করলেন, তাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব তোমার নয়; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে ধনসম্পদ তোমরা দান কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই দান করে থাক। অতএব, দানের পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদের অবশ্যই দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না (সূরা বাকারা, আয়াত, ২৭২)। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা সব ধর্মের মানুষদেরই দান কর।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, প্রথম দিকে মুসলমানরা অমুসলিম অভাবীদের দান করতে অনাগ্রহ দেখাত। তারা মনে করত, অমুসলিমদের দান করলে ওই দানের জন্য হয়তো তারা সওয়াব পাবে না। তখন আল্লাহতায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।

এমনকি অমুসলিম যুদ্ধবন্দি অর্থাৎ মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে বন্দি হওয়া অভুক্ত শত্রুদের আহার করানোরও প্রশংসা করা হয়েছে আরেকটি আয়াতে। সাহাবিদের উত্তম গুণাবলির প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেছেন, নিজেদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবী, এতিম ও বন্দিকে খাবার খাওয়ায় এবং বলে, ‘কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমরা তোমাদের খাবার দিচ্ছি। তোমাদের কাছ থেকে এর কোনো প্রতিদান আমরা চাই না, এমনকি কৃতজ্ঞতাও নয় (সূরা দাহর, আয়াত, ৮, ৯)।

সুনানে নাসায়িতে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াবের সূত্রে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.)-এর এক ইহুদি পরিবারকে সদকা দেওয়ার কথা উল্লিখিত রয়েছে।

সুতরাং মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষ সব মানুষকে অকৃপণভাবে দান করুন। আপনার প্রতিবেশী কোনো অমুসলিম পরিবার যদি অনাহারে থাকে, কোনো অমুসলিম সহকর্মী যদি বিপদে পড়ে, পথে-ঘাটে সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া কোনো ভিক্ষুক নারী যদি সাহায্য চায়, তাদের দান করতে, খাবার খাওয়াতে, সাহায্য করতে দ্বিধা করবেন না। আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী ওই দানের পূর্ণ প্রতিদানই আপনি পাবেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password