নতুন সংবিধান তৈরির ঘোষণা দিলেন এরদোগান

নতুন সংবিধান তৈরির ঘোষণা দিলেন এরদোগান
MostPlay

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান আজ তার ক্ষমতাসীন একে পার্টির সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন সংবিধান তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। এই সম্মেলনটি ছিল মূলত ২০২৩ সালকে ঘিরে তার পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটিকে ঢেলে সাজানো এবং পার্টির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করার। 

২০২৩ সালকে ঘিরে তুরস্কের প্রস্তুতি ব্যাপক। ওই বছর দেশটি উদযাপন করবে আধুনিক তুরস্কের শততম  প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এরদোগানেরও এ বছরটি  নিয়ে প্রস্তুতি কম নয়। তুরস্কের পরবর্তী নির্বাচনও ২০২৩ সালে। সংবিধান অনুযায়ী এরদোগান তখন শেষবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন।

আর তিনি তখন উপনীত হবেন জীবনের ৬৯ বছরে। তাই জীবনের শেষ সময়ে তার দেশকে  একটি সময় উপযোগী সংবিধান উপহার দিয়ে যেতে চান এ তুর্কি শাসক। তুরস্কের বর্তমান সংবিধানটি রচনা করা হয়েছিল ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে সামরিক জান্তার নির্দেশে। তখন সংবিধানে জনগণের মতামত বা গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়ার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় সামরিক বাহিনীকে। 

পরবর্তীতে সে সংবিধানে অনেক সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন তুরস্কের জন্য ছিল সময়ের দাবি।এরদোগান তার ১৯ বছর শাসনামলে অনেকবার নতুন সংবিধান গঠনের পরিকল্পনা হাতে নিলেও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার কারণে এতদিন পেরে উঠেননি।  

তার মতে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী একটি সংবিধান তৈরি করার এখনই মোক্ষম সময়। কী কী থাকবে এই সংবিধানে তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ এ সংবিধান তৈরির আগে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত নেয়া হবে।  

জনগণের মতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে এই সংবিধান হবে এমন একটি সংবিধান যা তুরস্কের বিগত ২০ বছরের অর্জনকে রক্ষা করবে। যে সংবিধান নিশ্চত করবে কুর্দি জনগোষ্ঠীর আরো বেশি অধিকার, অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরও আরও বেশি অধিকার দিবে, নারী অধিকারকে আরো সমুন্নত করবে, মানবাধিকার, পারিবারিক বন্ধন, তুরস্কের বৈদেশিক বিষয়ক নীতি, সামরিক  শক্তি, অর্থনীতি এ সবকিছুর রক্ষক হবে নতুন সংবিধান। 

তবে এই সংবিধান ঘোষণার মধ্য দিয়ে এরদোগান  আবারও তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিলেন। 

এ সংবিধান প্রণয়ন যতটা না সাধারণ জনগণকে ব্যস্ত রাখবে তারচেয়ে বেশি ব্যস্ত রাখবে এরদোগানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। কারণ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি শক্তিশালী পার্লামেন্ট শাসিত সরকারের ধারণা নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। 

সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা এরদোগানের ২০১৭ সালের গণভোটের মাধ্যমে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে একটি পার্লামেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থায় যেতে চান। কারণ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য কোনো এক প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতেই  হবে। আর পার্লামেন্ট ব্যবস্থায় কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও অন্য দলের সাথে জোট করে সরকার গঠন করতে পারে। 

তুরস্কের বিরোধী দলগুলোর এখনো পর্যন্ত এরদোগানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর মতো কোনো প্রার্থী নেই।  অর্থাৎ তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব বিরোধী দলগুলোর সমর্থকরা নির্দ্বিধায় ভোট দিবে এমন কোনো প্রার্থী দাঁড় করতে পারবে না।কারণ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যেমন কট্টর তুর্কি জাতীয়তাবাদী (যারা কুর্দিবিরোধী) দল আছে তেমন আছে কট্টর কুর্দি জাতীয়তাবাদী। 

আবার যেমন আছে কট্টর সেক্যুলার দল তেমন ডানপন্থি দলও আছে।  সুতরাং বিরোধী  দলগুলো পার্লামেন্ট ব্যবস্থায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে জোট গঠন করতে পারবে। 

কারণ পার্লামেন্ট নির্বাচনে যার যার অঞ্চলের সংসদ সদস্য নির্বাচন করবে জনগণ আর সেই সংসদ সদস্যরা চাইলে সংসদে অন্য দলের সাথে ঐক্য করে সরকার গঠন করতে পারে। আর রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয় জনগণের সরাসরি ভোটে।  সুতরাং সেখানে সব রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত চিন্তাধারার মানুষের ভোট পেতে পারে এমন প্রার্থী দরকার যা তুরস্কের বর্তমান বিরোধী দলগুলোর নেই।  

এদিক থেকে চিন্তা করলে নতুন সংবিধান গঠনের ঘোষণা দিয়ে এরদোগান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করলেন।কারণ সংবিধান এখন সময়ের দাবি। সবাই একটি নতুন সংবিধান চায়। বিরোধী জোটে থাকা কুর্দিরাও চায় একটি নতুন সংবিধান। সরকারও চায়।  

সুতরাং বিরোধী জোট যদি আগামী নির্বাচনে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় হয়তো তাদের একটি অল্টারনেটিভ সংবিধানের খসড়া নিয়ে আসতে হবে অথবা সরকার সাথে এক হয়ে একটি জাতীয় সংবিধান গঠন কমিটি তৈরি করতে হবে।  

উভয়দিক দিয়েই লাভবান হবে এরদোগান সরকার। কারণ এরদোগান সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করেই নতুন সংবিধান তৈরি করবে। বিরোধীরা হয়ত পার্লামেন্ট শাসিত সরকারকে ফিরিয়ে আনতে চাইবে। 

কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদেরও নতুন একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করতে হবে, যা তাদের দ্বারা সম্ভব না।  

কারণ তারা পার্লামেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থায় ঐকমত্য হলেও একটি নতুন সংবিধানে যেসব বিষয়ে থাকা দরকার সে সব বিষয়ে কোনোভাবেই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবে না। 

কারণ তাদের মধ্যে আছে পরস্পর ঘোরবিরোধী মতাদর্শের দল।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password