মানুষের হাতেই যখন মৌচাকের বাসা

মানুষের হাতেই যখন মৌচাকের বাসা
MostPlay

হৃদয়ের প্রেমে মজেছে এক রাণী মৌমাছি। দলবলসহ তার হাতে বাসা বেঁধে বসবাস করছে বছরের পর বছর ধরে। পেশাদার মধু সংগ্রাহক কাওসার আলী ওরফে হৃদয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করে গ্রামে গ্রামে সেই মধু বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্য প্রাণী, বিশেষ করে মৌমাছির প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে বিশেষ এক আশ্চর্য ক্ষমতা অর্জন করেছেন তিনি।

কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই, এক ঝাঁক মৌমাছি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ান হৃদয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মৌমাছির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এক যুবক। দুই বছর সাধনার পর মৌমাছির সঙ্গে এতটাই সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন যে, তিনি চাইলে মৌমাছি তার শরীরের যে কোনো স্থানে বাসা বাঁধতে পারে। তবে তার হাতেই বাসা বাঁধে বেশির ভাগ সময়।

মৌমাছির সঙ্গে যুবকের এমন সখ্যতার খবরে তাকে দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন কৌতূহলী মানুষ। মৌমাছিপ্রেমী এই যুবকের নাম কাউসার আলি হৃদয়। ২৭ বছর বয়সী হৃদয়ের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কসবা গ্রামের পলিথিন পাড়ায়। বাবা আবুল কালাম আজাদ পেশায় কৃষক, মা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। ৩ ভাই বোনের মধ্যে হৃদয় বড়। ছোটভাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। হৃদয়ের লেখাপড়ার দৌড় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। কৃষিকাজের পাশাপাশি মৌমাছির মধু সংগ্রহ করেন তিনি।

সরিষা মৌসুম ছাড়াও আম ও লিচু মৌসুমেও তিনি মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন। হৃদয়ের মধু বেশ ভালো বলে জানান গ্রামের কৃষক কয়েসউদ্দিন। চার মেয়ের জনক হৃদয় প্রায় ১০-১২ বছর আগে কৃষিকাজের পাশাপাশি মৌচাষের চিন্তা করেন। পাশাপাশি তার মাথায় মৌমাছিকে বশ করার ভাবনাও আসে। কিন্তু কিভাবে, এর উত্তর জানা ছিল না তার। হঠাৎ করে গ্রামের এক গুরুজির সঙ্গে গল্প করার সময় মৌমাছিকে বশ করার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।

গুরুজি সে বিদ্যা শিখিয়ে দিলেও তার নামটি কখনো প্রকাশ না করার জন্য হৃদয়কে বলে দেন। আর এ থেকেই মৌমাছির প্রতি ভালো লাগা এবং ভালো লাগা থেকেই জন্ম নেয় ভালোবাসার। মৌমাছি সম্পর্কে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কাউসার আলি হৃদয়। বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি ঘরে মৌমাছির চাষ করেন হৃদয়।

প্রতিদিন পরম মমতায় মৌমাছিগুলোর যত্ন নেন এবং মধু আহরণ করেন। অবসর সময়ে পাড়া-মহল্লায় ঘুরতে বের হলে হাজার হাজার মৌমাছিকে বাম হাতের কব্জির ওপর নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

হৃদয় জানান, প্রথমে রানী মৌমাছিকে হাতে নেন। রানীকে নিলে অন্য মৌমাছিরা এমনিতেই চলে আসে। হৃদয়ের এ কর্মকা- এলাকার অনেক শিশু তার পিছু নেই। শিশুরা এ দেখে আনন্দও পায়। বাদ যান না বড়রাও। গ্রামের অনেকেই তাকে ‘মৌমাছি হৃদয়’ নামে ডাকেন। হৃদয় জানান, তার এ কাজে পরিবারের কেউ বিরোধিতা করে না। মৌমাছি তার শরীরে চলাফেরা করলেও কখনো তাকে কামড়ায় না বলেও জানান ‘মৌমাছি হৃদয়’।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password