১১ ঘন্টার চেষ্টায় সুগন্ধা নদীতে জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

১১ ঘন্টার চেষ্টায় সুগন্ধা নদীতে জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে
MostPlay

১১ ঘণ্টার চেষ্টায় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর জাহাজে দ্বিতীয় দফায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ থেকে তেল অপসারণের সময় দ্বিতীয়বারের মতো বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়া আগুন প্রায় ১১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর চেষ্টার পর আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঝালকাঠির স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান চলছে। বিস্ফোরণে জাহাজের মধ্যের অংশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ জাহাজে এখনো প্রায় চার লাখ লিটার তেল মজুত আছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঝালকাঠি শহরের পৌরসভার খেয়াঘাটসংলগ্ন সুগন্ধা নদীর মধ্যে রাখা জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ শওকত (৩৫) নামের এক পুলিশ সদস্য ও মো. শরিফ (৪০) নামের অপর এক ব্যক্তিকে রাতেই ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শরিফ দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে তেল অপসারণের কাজে নিয়োজিত সাগর নন্দিনী-৪ নামে একটি তেলের জাহাজের কর্মচারী।

তাঁদের প্রথমে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে পুলিশ সদস্য শওকতের শরীরের ১৬ শতাংশ ও শরিফের শরীরের প্রায় ৫৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে ঝালকাঠি সদর থানার উপরিদর্শক (এসআই) গণেশ চন্দ্র ঘরামির নেতৃত্বে ১১ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন নৌ পুলিশের সদস্য।

বিস্ফোরণে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন আহত হন। তাঁদের অধিকাংশই আতঙ্কে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিকট শব্দে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি। বিস্ফোরণে দগ্ধ আরেক পুলিশ সদস্য দ্বীপ (৩২) একটু সুস্থ হওয়ায় তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, জাহাজ থেকে তখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটানো অব্যাহত রেখেছেন।

বিস্ফোরণে জাহাজের মধ্যের অংশের লোহার পাত বিধ্বস্ত হয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। সারা রাত কাজ করে পরিশ্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে সুগন্ধা নদীর তীরের সরকারি তেলের ডিপোর কাছে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী একটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। জাহাজে মোট নয়জন কর্মী ছিলেন।

তাঁদের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই জাহাজ থেকে তেল অপসারণের সময় গতকাল সন্ধ্যায় আবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী শাকিল রনি নামের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, গতকাল বিকেল থেকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ থেকে সাগর নন্দিনী-৪ নামের অপর একটি জাহাজে জ্বালানি তেল অপসারণের কাজ চলছিল।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণে দুটি জাহাজে আগুন ধরে যায়। এ সময় কয়েকজনকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। পরে স্থানীয় জনগণ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সূত্রে জানা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে রাতেই ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০টি ইউনিট যুক্ত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে পানির সঙ্গে বিশেষ ফোম ব্যবহার করা হয়।

রাতভর চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রত্যক্ষদর্শী এসআই গণেশ চন্দ্র ঘরামি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সন্ধ্যায় জাহাজে বিস্ফোরণে সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আমাদের বহন করা ট্রলারের চালক আতঙ্কে নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে পুলিশ সদস্যরাও নদীতে ঝাঁপ দিতে গিয়ে আহত হন। দুজন আগুনে দগ্ধ হন।’

জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত ব্যক্তিরা অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভীতির মধ্যে আছেন। তাঁদের সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক বলেন, ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা দগ্ধ দুজনের সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ঝালকাঠিতে ভর্তি থাকা আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password