দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট ক্যাপ পরেছেন যারা

দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট ক্যাপ পরেছেন যারা
MostPlay

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় ৩৫ এর উপর বয়স হয়ে গেলেই অবসরের চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন ক্রিকেটাররা। পেস বোলারদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সটাও যেন বেশি হয়ে যায়। এর আগেই অনেক পেস বোলারকে দেখা যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিতে।

কিন্ত গতকাল পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে ৩৬ বছর বয়সী পেসার তাবিশ খানের। তবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটার নন। এমনকি তিনি এশিয়ার এবং নিজ দল পাকিস্তানেরও সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটার নন। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটার হলেন ইংল্যান্ডের জেমস সাউদার্ট। ৪৯ বছর এবং ১১৯ দিন বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তার। আজকের আয়োজনটি আমরা সাজিয়ে প্রত্যেক টেস্ট খেলুড়ে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে।

অস্ট্রেলিয়া - ডন ব্ল্যাকি

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট ম্যাচে অভিষেক হয়েছে অফ স্পিনার ডন ব্ল্যাকির। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬ বছর এবং ২৫৬ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ডন ব্ল্যাকির টেস্ট ক্যারিয়ার খুব লম্বা হয়নি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র ৩টি টেস্টে মাঠে নামতে পেরেছেন। ৩টি টেস্ট ম্যাচে তিনি ১৪ উইকেট শিকার করেছিলেন।

ইংল্যান্ড - জেমস সাউদার্টন

টেস্ট ইংল্যান্ডের অভিষিক্ত প্রবীণ ক্রিকেটার হলেন জেমস সাউদার্টন। টেস্ট ইতিহাসের অভিষেক হওয়া সবচেয়ে প্রবীণ ক্রিকেটারও তিনি। ৪৯ বছর এবং ১১৯ দিন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। জেমস সাউদার্টনের যে ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল সেই ম্যাচে আসলে দুদলের সবার অভিষেক হয়েছিল। কারণ সেটি ছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। সব মিলিয়ে সাসেক্সের এই ক্রিকেটার দুটি টেস্ট খেলে সাতটি উইকেট শিকার করেছেন।

ভারত - রুস্তমজী জামশেদজী

১৯৩৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ৪১ বছর ২৭ দিনে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে রুস্তমজী জামশেদজীর। আর তাতেই তিনি বনে যান ভারতের সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষিক্ত টেস্ট খেলোয়াড়। সমগ্র খেলোয়াড়ি জীবনে এই একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন রুস্তমজী জামশেদজী। জীবনের একটি মাত্র টেস্ট ম্যাচে তিনি ৩ উইকেট শিকার করেন।

নিউজিল্যান্ড - হার্ব ম্যাকগির

১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার হার্ব ম্যাকগিরের অভিষেক হয় ৩৮ বছর ১০১ দিনে। তার থেকে বেশি বয়সে আর কোন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারের অভিষেক হয়নি। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে হার্ব ম্যাকগিরের ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স থাকলেও টেস্ট ক্যারিয়ার রাঙাতে পারেননি তিনি। মাত্র ২ টি টেস্ট ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। যেখানে ৫১ রানের পাশাপাশি মাত্র ১ উইকেট শিকার করেন তিনি।

পাকিস্তান - মিরান বকস

পাকিস্তানের অভিষিক্ত বুড়োও একজন স্পিনার। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে ৪৭ বছর ২৮৪ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল মিরান বকসের। অভিষেক টেস্টে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে প্রাপ্তি শূন্য। ব্যাস এই পর্যন্তই। দুই টেস্টেই থেমে গেছে তার টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে ৫১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলে গেছেন এই পাকিস্তানি অফ স্পিনার।

সাউথ আফ্রিকা - ওমর হেনরি

সাউথ আফিকার ওমর হেনরি ছিলেন একজন প্রকৃত অলরাউন্ডার। ব্যাটে বলে সমানভাবে দলকে সাহায্য করার ক্ষমতা ছিল তার। ওমর হেনরির প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটের পরিসংখ্যান তার হয়ে বেশ কথা বলে। ১৩১টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ৪৫৬৬ রানের সাথে ৪৪৩ উইকেট এবং লিস্ট এ ম্যাচে ১৫৩ ম্যাচে ২২৮২ রানের পাশাপাশি ১০৫ উইকেট শিকার করেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। এমনটাও বলা যেতে পারে সাউথ আফ্রিকা দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত থাকার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পেয়ছেন অনেক দেরীতে। যখন তার টেস্ট অভিষেক হয় তখন তার বয়স ৪০ বছর ২৯৫ দিন। ৩ টেস্টের ছোট ক্যারিয়ারে ৫৩ রান ও ৩ উইকেট আছে তার ঝুলিতে।

শ্রীলঙ্কা - সোমচন্দ্র ডি সিলভা

সোমচন্দ্র ডি সিলভা শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বুড়ো অভিষিক্ত টেস্ট ক্রিকেটার। ৩৯ বছর ২৫১ দিনে তার টেস্ট অভিষেক হয়। তিনি শ্রীলঙ্কার হয়ে ১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ১২ টেস্টে ৩৭ উইকেট শিকার করেন সোমচন্দ্র ডি সিলভা। শ্রীলঙ্কার হয়ে ২টি টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতাও আছে সোমচন্দ্র ডি সিলভা।

ওয়েষ্ট ইন্ডিজ - নেলসন বেটানকোর্ট

ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নেলসন বেন্টাকোর্ট ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ বছর ২৪২ দিন বয়সে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তিনি ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বুড়ো অভিষিক্ত খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হয় তার। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। একমাত্র টেস্টে তিনি ৫২ রান সংগ্রহ করেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো অভিষেকের খেলায় তিনি ক্যারিবীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। ওই সময় সিরিজের প্রতিটি ম্যাচের জন্য স্বাগতিক দলের পৃথক, আদিবাসী অধিনায়ক থাকার নীতিমালার কারণেই মুলত অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান নেলসন বেটানকোর্ট।

জিম্বাবুয়ে - অ্যান্ডি ওলার

১৮ই ডিসেম্বর ১৯৯৬ সাল ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে ৩৭ বছর ৮৪ দিনে জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্যাপ মাথায় পরেন অ্যান্ডি ওলার। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সে জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে মাত্র ২টি টেস্টেই মাঠে নামার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। দুই টেস্টে একটি ফিফটির সাহায্যে ৬৯ রান করেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সাথে ৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচও খেলেছেন অ্যান্ডি ওলার।

বাংলাদেশ – এনামুল হক মনি

বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বা হাতি স্পিনার এনামুল হক মনি। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও টেস্ট ক্রিকেটে তার তার অভিষেক হয় ২০০১ সালে। কারণ এর আগের বছর বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে। ২০০১ সালে চট্টগ্রামে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যখন এনামুল হক মনির টেস্ট অভিষেক হয় তখন তার বয়স ছিল ৩৫ বছর ৫৮ দিন। এখন পর্যন এনামুল হক মনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষিক্ত টেস্ট ক্রিকেটার। এনামুল হক মনি তার ক্যারিয়ারে মোট ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলছেন। ১০ টেস্টে ১৮ উইকেট আছে তার নামের পাশে। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ১৩৬ রানে ৪ উইকেট।

আয়ারল্যান্ড – এড জয়েস

সদ্য টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা আয়ারল্যান্ডের অভিষিক্ত বয়জৈষ্ঠ ক্রিকেটার হলেন এড জয়েস। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের অভিষেক টেস্টের একাদশে ছিলেন এড জয়েস। অভিষেক টেস্ট ম্যাচে তার বয়স ছিল ৩৯ বছর ২৩২ দিন। এখন পর্যন্ত ওই একটি টেস্ট ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন এড জয়েস। একমাত্র টেস্ট ম্যাচে এই ওপেনার দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৪৭ রান। এড জয়েস আয়ারল্যান্ড দলে খেলার আগে ইংল্যান্ড দলের হয়েও একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।

আফগানিস্তান – মো. নবী

২০১৮ সালের জানুয়ারীতে ভারতের সাথে অভিষেক টেস্ট খেলে টেস্ট ক্রিকেটের নতুন দল আফগানিস্তান। সেই দলের সবচেয়ে বয়ষ্ক খেলোয়াড় ছিলেন অলরাউন্ডার মো. নবী। অভিষেক টেস্টে তার বয়স ছিল ৩৩ বছর ১৪ দিন। নতুনদের সুযোগ করে দিতে ইতিমধ্যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারে ৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩৩ রান ও ৮টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password