যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে নিভে গেলো বাংলাদেশি তাহমিনার জীবন যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে নিভে গেলো বাংলাদেশি তাহমিনার জীবন যুদ্ধ
MostPlay

প্রত্যেক জীবনকেই একদিন মৃত্যুও স্বাদ গ্রহণ করতে হয় কিংবা হবে। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু যেন অপ্রত্যাশিত। বিধির-বিধান তো আর খন্ডানো যায় না! তাইতো স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক; সব মৃত্যুকেই মেনে নিতে হয়। 

এমনটি একটি ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে। রাজ্যের ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ হারালো বাংলাদেশী এক মধ্য বয়সী নারী। নিহতের নাম তাহমিনা আকতার। দুই কন্যা সন্তানের  জননীর সবে মাত্র ৩৯ বছর। বড় মেয়ের বয়স ১৫ আর ছোট্ট খুকির মাত্র ৪ বছর। 

২ সন্তানের মা তাহমিনা মাত্র ১০ মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পান তারা। এরপর ওই বছরের এপ্রিেলর ১৪ তারিখে আমেরিকায় আসেন। আর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটলো ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। দেশে গ্রামের বাড়ি ফুলগাজি ফেনি, বাংলাদেশ।

স্বপ্নের সোনার হরিণের দেশে এসেই জীবন-যুদ্ধে নেমে পড়েন তারা। স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ শুরু করেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, আমেরিকার আসার পর একটি বাড়ির বেইজমেন্ট ভাড়া নেন তারা। জীবনযাত্রা ব্যয় বহুল হওয়া ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ নেন তিনি। স্বামীকে সহায়তা দিতেই তার এ চ্যালেঞ্জ। একটু উন্নত জীবনের আশায় আমেরিকার বুকে পাড়ি জমিয়ে না ফেরার দেশে তাহমিনা। এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার স্বজনদের মাঝে। অসহায় দুটি সন্তান নিয়ে এখন নির্বিকার তাহমিনার স্বামী। 

জানা গেছে, গেল শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টা ৪৫ মিনিটে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বাংলাদেশী তাহমিনা আকতার। যিনি কর্মস্থলে ফিরছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি পুলিশ। পুলিশ বলছে, স্প্রিংফিল্ডের একটি ক্রসওয়াকের বাইরে স্থানীয় ভিলা পার্ক এবং ব্যাকলিক রোড পার হচ্ছিলেন তাহমিনা। রাস্তা পারাপারের সময় একটি কার এসে ধাক্কা মারে তাকে। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তাহমিনা আকতার। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। কিন্তু দু’দিন পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

এদিকে, তাহমিনা আকতার হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার স্বামী ও সন্তানদেও পাশে দাঁড়িয়ে একটি সামাজিক সংগঠন। তারা নিহত এ বাংলাদেশীর লাশ দাফন’সহ পরিবারের সহায়তা একটি ফান্ডরাইজিং পেইজ খুলেছে। লঞ্চগুড-ডট-কম (https://www.launchgood.com/project/mother_of_2_killed_in_pedestrian_accident?fbclid=IwAR0Vj78hn-9IPWwfPCFZx3G0RdInl6yneLAq2V6Jej3IYN1Ca-OqbUrKX7c#!/) নামের এই পেইজে (অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ) সাপোর্ট তাহমিনা বলে ১৫ হাজার ইউএস ডলার চাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ডলার জমা পড়েছে। 


ফান্ডরাইজিং পেইজে ফাহিম খান নামক একজনের ফোন নম্বর + ১ ৫৭১-৩৭৮-৯৭৭৯, ইকবাল  +১ ৭০৩-৭২৭-৭৬৮৬ দেয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন যে কেউ। চ্যানেল টিটির কাছে ভার্জিনিয়ার এক সমাজকর্মী বলেছেন, নিহত বাংলাদেশী তাহমিনাকে দাফন করা হয় ৩মার্চ মঙ্গলবার।

এর আগে মরহুমার নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় স্প্রিংফিল্ডের মদীনা ইসলামিক সেন্টারে। বাদ যোহর জানাজা শেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফেডিরিক্সবার্গেও ‘এমএএ-সিমেট্রি (কবরস্থানে)’। মাত্র দশ মাস আগে মাতৃভূমি ছেড়ে আসা তাহমিনা এখন চিরনিদ্রায় শায়িত যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার মাটিতে। 

বিডিটাইপ সংবাদের লেখক হতে পারেন আপনিও। আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, ক্যাম্পাসের খবর, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা পাঠান: [email protected] ই-মেইলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password