পেটের জ্বালায় দেহব্যবসায় নামছে নাবালিকারা

পেটের জ্বালায় দেহব্যবসায় নামছে নাবালিকারা
MostPlay

স্বাধীনতার পর কেটে গিয়েছে সাত দশকের বেশি সময়। তারপরেও দারিদ্র্য আর খিদের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হতে পারেনি এ দেশ। এখনও পেটের জ্বালা মেটাতে বেছে নিতে হয় দেহব্যবসা। পরিবারের হাল ধরতে নাবালক-নাবালিকাকে পাঠাতে হয় দিনমজুরিতে। আর সেখানে তারা মহাজনের যৌন লালসার শিকার হলেও চুপ করে থাকে পরিবার। কারণ, পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, কিংবা বাড়ির অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে একমাত্র ভরসা ওই  সামান্য রোজগার। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) এরকমই এক মর্মান্তিক ছবি উঠে এসেছে। যা দেখে প্রশাসনের সাফাই, অভিযোগ এলে তো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ জানাবে কে!

উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বুন্দেলখণ্ড (Bundelkhand) এলাকা। সেই এলাকার পাথরখাদান অঞ্চলের চিত্রকূটের (Chitrakoot) মর্মান্তিক ছবি সামনে এসেছে। এমনিতেই দারিদ্র্যের অন্ধকারে ডুবে চিত্রকূট অঞ্চল। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউন (Lockdown)। কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে পরিবারের পুরুষরা। ফলে পরিবারের হাল ধরতে পথে নেমেছেন বাড়ির মেয়ে-বউরা। বাদ পড়েনি নাবালক-নাবালিকারাও। আর এই পরিস্থিতির সুযো নিয়েছে কিছু সুবিধাবাদীর দল। পরিস্থিতির সুয়োগ নিয়ে নাবালক-নাবালিকাদের কম মজুরিতে পাথর খাদানের কাজে নিয়োগ করেছে। যেখানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি হওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ১০০ টাকা হাতে ঠেকায় খাদান মালিকরা। কপাল ভাল থাকলে কখনও-সখনও ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তবে তা এমনিতে মেলেনা। খাদান মালিক বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের যৌন চাহিদা মেটোতে হয় তাদের। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না বলছে চিত্রকূটের খুদেরা। কারণ, ওই টাকার উপর নির্ভর করে চলে পরিবার। ফলে মুখ বুজে মেয়ের সেই অপমান সহ্য করে নেয় বাবা-মা। প্রশাসনের কাছে খাতায়-কলমে কোনও অভিযোগও দায়ের হয় না।

করভি গ্রামের এমনই এক খুদে খাদান কর্মীর কথায়, “মালিকের কাছে কাজ চাইতে গেলে শর্তসাপেক্ষে কাজ মেনে। বলা হয়, খাদানে কাজ করার পাশাপাশি দেব ব্যবসায়ও নামতে হবে। উপায় না থাকায়, তাতেই রাজি হয় আমরা।” একই অভিজ্ঞতা দাফরি গ্রামের এক নাবালিকার। তাঁর কথায়, “মালিকরা তাদের আসল নাম-পরিচয় আমাদের বলে না। আমাদের আসল নামও খাদানের খাতায় লেখা হয় না। কাজে ঢোকার আগে যা মজুরি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন, তার অর্ধেক হাতে আসে।” 

এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক শেষমণি পাণ্ডে বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” চিত্রকূটের এএসপি আর এস পাণ্ডের কথায়, আমাদের কাছে এরকম কোনও ঘটনার খবর নেই। গ্রামের পাহারাদারদের সতর্ক থাকতে বলেছি। গ্রামে-গ্রামে ঘুরে আমারা খবর নিই। এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি।” বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তদন্ত শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়্যারপার্সন বিশেষ গুপ্তা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password