ঝড়ের তাণ্ডবে ৪০ গ্রাম লণ্ডভণ্ড, ঘুমন্ত চারজনের মৃত্যু

ঝড়ের তাণ্ডবে ৪০ গ্রাম লণ্ডভণ্ড, ঘুমন্ত চারজনের মৃত্যু
MostPlay

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ে মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই ঝড়ের সময় ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এছাড়া ঝড়ে ৪০টি গ্রামে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ি।

দেয়াল চাপায় নিহতরা হলেন, ক্ষেতলাল পৌর শহরের খলিশাগাড়ী মহল্লার একই পরিবারের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শিল্পি বেগম, তার দুই ছেলে নেওয়াজ ও নেওয়ামুল এবং কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের ছালামতের স্ত্রী মরিয়ম নেছা।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বয়ে যাওয়া এ ঝড়ে ভেঙে গেছে শত শত গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বোরো ধান। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিস রাস্তায় গাছ সরানোর কাজ শুরু করে। ঝড়ে ক্ষেতলাল এবং কালাই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ঝড়ে মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় স্ত্রী ও সন্তানদের হারিয়ে খলিশাগাড়ী মহল্লার জয়নাল আবেদীন এখন প্রায় পাগল। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে আমাদের ওপর। আমি ওই সময় বের হতে পারলেও স্ত্রী ও সন্তানরা বের হতে পারেননি।

খলিশাগাড়ী মহল্লার খুরশিদ আলম জানান, এত বড় ঝড় আগে কখনো দেখিনি। ঝড়ের সময় কতবার আল্লাহকে স্মরণ করেছি তা আমার মনে নেই। ওই সময় বার বার মনে হয়েছে আর বোধহয় আমরা কেউ বাঁচবো না। ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা গ্রামের বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

দুই উপজেলার বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী থাকে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড বেগে ঝড়। এতে বাতাসের তীব্রতায় মুহূর্তেই বাড়ির টিনের চালা উড়ে যায়। উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছ, ভেঙে গেছে দুই উপজেলার শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বাতাস আর বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ জুড়ে বোরো ধান কাদা-পানিতে একাকার হয়েছে। ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জালাইগাড়ী গ্রামের আব্দুল করিম বলেন, যেভাবে খুঁটিগুলো ভেঙে গেছে আর তারগুলো ছিঁড়ে গেছে তাতে ১৫ দিনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে কিনা সন্দেহ।

ক্ষেতলাল ইউএনও আরাফাত রহমান বলেন, ঝড়ের তাণ্ডবে খলিশাগাড়ী মহল্লার একই পরিবারের মা ও দুই ছেলে মারা গেছেন। এছাড়া শত শত বাড়ি ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান জানতে কাজ চলছে।

ডিসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার পর জেলায় প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামের দুই শিশু সন্তানসহ এক নারী এবং কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের এক বৃদ্ধা দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন। ক্ষেতলালের তিলাবদুল এলাকায় মুরগির সেড ভেঙে ৪০ হাজার মুরগি মারা গেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password