মায়ের দেয়া বিষ খেয়ে নিষ্পাপ মেয়ের মৃত্যু, কাঁদছে চরপাড়া গ্রাম

মায়ের দেয়া বিষ খেয়ে নিষ্পাপ মেয়ের মৃত্যু, কাঁদছে চরপাড়া গ্রাম
MostPlay

পারিবারিক কলহের জের ধরে মা আছমা আক্তার ইঁদুর মারার বিষযুক্ত ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করে তার একমাত্র সন্তান শিউলী আক্তার মায়া (১০) কে। মায়ের দেয়া বিষ খেয়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারায় নিষ্পাপ শিশুটি।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শিউলী আক্তার মায়ার লাশ দাফন করা হয়েছে।

 

এদিকে একই দিন সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আদালতে কন্যা হত্যার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক মা আছমা আক্তার (৩৩)।

বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আক্তারের খাসকামরায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ঘাতক মা আছমা আক্তারকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই অজিত কুমার সরকার আদালতে আছমা আক্তারের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘাতক মা আছমা আক্তার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ চরপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার মেয়ে। নিহত শিউলী আক্তার মায়া স্থানীয় জাহানারা প্রিক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

শিশু শিউলী আক্তার মায়ার এমন নৃশংস খুনের ঘটনায় চোখের জলে ভাসছে তার সহপাঠিরা। নানা সুরুজ মিয়া ও আত্মীয়স্বজনদের আহাজারি থামছেই না। ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুটির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

 

এলাকাবাসীসহ স্থানীয়রা ঘাতক মা আছমা আক্তারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এই দাবি জানিয়েছেন খোদ আছমা আক্তারের জন্মদাতা বাবা সুরুজ মিয়াও।

এসআই অজিত কুমার সরকার জানান, প্রায় ১২ বছর আগে আছমা আক্তারের নাটোর জেলার বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দু’য়েক পর শিউলী আক্তার মায়ার জন্ম হয়। মায়ার জন্মের বছর তিনেক পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় আশরাফ উদ্দিন মারা যান।

 

এরপর আব্দুল কাদের নামে একজনের সাথে আছমা আক্তারের বিয়ে হলেও পরবর্তিতে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ফলে বাবার সংসারেই একমাত্র কন্যা সন্তান শিউলী আক্তার মায়াকে নিয়ে বসবাস করে আসছিল আছমা আক্তার।

আছমা আক্তাররা সাত বোন ও এক ভাই। একমাত্র ভাই নয়ন মিয়ার সাথে নানা বিষয়ে আছমা আক্তারের বিরোধ চলে আসছিল।

এর জের ধরে একাধিকবার প্রকাশ্যে একমাত্র সন্তান শিউলী আক্তার মায়াকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করে আছমা। কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের কারণে আছমার মেয়েকে হত্যার চেষ্টা এর আগে ব্যর্থ হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে ভাই নয়ন মিয়া বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করে আসছেন। এছাড়া বাবা-মা’র কাছে প্রায়ই আছমা টাকা-পয়সা চেয়ে না পেলে বিবাদে জড়াতো।

পারিবারিক এই কলহের জের ধরে আছমা আক্তার পুনরায় মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আছমা শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের কাচারিবাজার এলাকার একটি দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে ১০টি ইঁদুরের বিষের ট্যাবলেট ক্রয় করে।

 

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুল থেকে কন্যা মায়াকে ডেকে আনে আছমা। বাড়ির উঠানে মেয়ে মায়ার হাতে একটি বিষযুক্ত ট্যাবলেট দিয়ে খেয়ে নিতে বলে। মায়া ট্যাবলেটটি খেয়ে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শরীরে প্রতিক্রিয়া দেয়া দেয়।

এ অবস্থায় আছমা মেয়ে মায়াকে আরেকটি ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বললে মায়া তার শরীর খারাপ লাগছে জানিয়ে খেতে অস্বীকৃতি জানায়।

মায়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বিষয়টি স্বজনদের নজরে আসে। তারা তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে ১২টার দিকে মায়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত শিউলী আক্তার মায়ার নানা সুরুজ মিয়া তার মেয়ে আছমা আক্তারকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন।

 

মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওইদিনই আছমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজ কন্যাকে বিষ খাইয়ে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দেয় আছমা আক্তার।

পরে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তাকে আদালতে পাঠানো হলে সে সন্তান হত্যার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন অমানবিক নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে। ঘাতক মা আছমা আক্তারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password