নওগাঁয় আত্নসাত করা প্রবাসির নিকট হতে বিয়ের অলংকারসমুহ উদ্ধার

নওগাঁয় আত্নসাত করা প্রবাসির নিকট হতে বিয়ের অলংকারসমুহ উদ্ধার
MostPlay

নওগাঁয় এক প্রবাসির নিকট হতে আত্নসাত করা বিয়ের অলংকারসমুহ উদ্ধার করে আরেক প্রবাসি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে থানা পুলিশ।

পুলিশের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নওগাঁবাসী। গত ১৯ জুলাই (সোমবার) প্রবাসি মোহাম্মদ বক্কর সিদ্দিক সোহাগকে আটক করে ওইদিনই জেল হাজতে পাঠানো হয়। সোহাগ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের রামরায়পুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। ঘটনার এক সপ্তাহ পর ২৪ জুলাই ‘ডিস্ট্রিক পুলিশ নওগাঁ’ ফেসবুকে পেজে বিষয়টি নিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয়।

থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার আজু তালুকদার গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (২৮)। তিনি প্রায় ১০-১২ বছর থেকে দুবাইতে থাকেন। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর তার বোনের বিয়ের আলাপ-আলোচনা হতে থাকে।

এক পর্যায়ে চুড়ান্তভাবে বিয়ের দিন ধার্য্য হয়। কিন্তু বাংলাদেশে লকডাউন পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক কারণে মহিউদ্দিনের দেশে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

অপরদিকে, দুবাইতে একসাথে কাজ করা ও পাশাপাশি বসবাসের কারণে মোহাম্মদ বক্কর সিদ্দিক সোহাগ নামে এক যুবকের সঙ্গে মহিউদ্দিনের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। মহিউদ্দিন জানতে পারেন সোহাগ কিছুদিনের মধ্যে ছুটিতে তার গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সেই সুবাদে মহিউদ্দিন তার বোনের বিয়ের জন্যে তিলতিল করে গচ্ছিত রাখা অলংকার সোহাগের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

গত ১১ জুলাই সোহাগ দেশে এসে মহিউদ্দিনের পরিবারের নিকট বুঝিয়ে দিবে। তার মাধ্যমে দুইটি স্বর্ণের বার (ওজন ২৩৩ দশমিক ৫ গ্রাম (২০ভরি)৷  যার মূল্য প্রায় ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৭২০ টাকা, একটি অ্যাপোল কোম্পানির ল্যাপটপ, একটি ১২ প্রো আইফোন।

এছাড়া আরো নয় ভরি স্বর্ণ, গলার চেইন, টিকলি, দুইটি ডাভ সাবান, ১০ প্যাকেট বেনসন সিগারেট ও দুই প্যাকেট চকলেট সোহাগ এর মাধ্যমে পাঠানো হয়। সোহাগ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর মালামালগুলো মহিউদ্দিনের পরিবারের নিকট বুঝিয়ে দেননি এবং কোন যোগাযোগ করেননি। লোভের বশবর্তী হয়ে মালামালগুলো প্রতারণামুলক নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এমনকি মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সোহাগ।

মালামাল না পেয়ে মহিউদ্দিনের ফুফাতো ভাই আমানউল্লাহ লোকজনসহ সোহাগের বাড়ি নওগাঁতে আসেন। তার বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন কেউ তার খোঁজ দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে গত ১৯ জুলাই নওগাঁ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

বিষয়টি পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়াকে অবগত করা হলে তিনি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জুয়েলের তত্বাবধানে উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হানিফ উদ্দিন মন্ডল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সোহাগের অবস্থান নিশ্চিত করেন।

পরে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সোহাগকে আটক করা সহ মালামালসমূহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মালামালসমূহ প্রবাসি মহিউদ্দিনের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

আশরাফুল নয়ন কমেন্টে লিখেছেন,‘শুভ কামনা নওগাঁ জেলা পুলিশের কর্ণধার প্রকৌশলী আবদুল মান্না মিয়া স্যার, ওসি সদর ও মামলার আইও হানিফ ভাইয়ের জন্য। আশা করি আপনাদের এরকম দায়িত্বশীলতার জন্য আমরা একটি অপরাধ মুক্ত নওগাঁ পাব।

আব্দুর রহমান রানা লিখেছেন, ‘মানুষের লোভ বেশি। মানুষ টাকার কাছে নিজের পরিচিত লোকজনকেও ভুলে যায়। এখানেই সমস্যা।

নওগাঁ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হানিফ উদ্দিন মন্ডল বলেন, মোহাম্মদ বক্কর সিদ্দিক সোহাগ দেশে আসার পরই লোভে পড়ে মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

এরপর মহিউদ্দিনের পরিবার সোহাগের ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাড়িতে যায়। কিন্তু তাকে অনেক খোঁজাখুজি করে তারা পাইনি। পরে এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের ফুফাতো ভাই আমানউল্লাহ প্রথমে থানায় একটি অভিযোগ করে।

তিনি বলেন, অভিযোগের পর আমরা সোহাগের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করি। পরে অভিযোগটিকে প্রতারণামুলক মামলা হিসেবে রজু করা হয়। ওইদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password