কলাপাড়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর ছ’ আনিপাড়া গ্রাম

কলাপাড়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর ছ’ আনিপাড়া গ্রাম
MostPlay

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি অধিগ্রহণে বিলুপ্ত হতে চলেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের আড়াইশ’ বছরের পুরনো ছ’ আনিপাড়া গ্রাম। ইতোমধ্যে বালি চাপা পড়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুকুর, জমিসহ পূর্ব-পুরুষদের শ্মশান। পূর্ব পুরুষদের ভিটে আগলে টিকে থাকা ছয়টি পরিবার দিন গুনছেন উপসনালায়সহ বসতভিটা হারানোর। ভূমিদস্যু আর দালালচক্রের ষড়যন্ত্রে হারনোর শংকায় বসতভিটার ক্ষতিপুরনের টাকা। অভিযোগ, প্রশাসনকে জানালেও তারা রয়েছেন নির্বিকার।

পাড়ার বাসিন্দারা আরো জানান, ফ্রু ওয়ান মগনীর মাধ্যমে ১৭৮৪ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নে গোড়া পত্তন ঘটে উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায়ের ছ’ আনিপাড়া গ্রামটির। একসময়ে এখানে ছিল শত পরিবারের বসবাস। সময়ের পরিক্রমায় দারিদ্রতা নিয়ে এখানে এখন বসবাস করছে ছয়টি পরিবারের ২৮জন সদস্য। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুমি অধিগ্রহনে প্রায় আড়াই’শ বছরের পুরনো রাখাইন এ গ্রামটি হতে যাচ্ছে বিলুপ্ত। ফলে পূর্ব পূরুষরেদর শেষচিহ্নসহ ভিটে আকড়ে থাকা এ ছয়টি পরিবারকে হতে হচ্ছে উচ্ছেদ। ক্ষতিপুরনের টাকা প্রদান কিংবা পুর্নবাস না করেই বার বার নোটিশ দিয়ে স্কাবেটর মাধ্যমে বালু ফেলে জায়গা দখলের চেস্টা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে চাষযোগ্য জমিসহ বসতভিটা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ।

পাড়ার বাসিন্দারা জানান, পায়রা বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় গ্রামটি বাদ দেয়ার বারবার জোড়ালো জানায় পাড়াবাসী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করে বারবার নোটিশসহ ভয়ভীতি প্রদান করে আসছে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রতিদিন স্কাবেটর লাগিয়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ভাঙা হচ্ছে। বালু ফেলা হচ্ছে।

তারা আরো জানান, পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার চিলা এলাকার মৃত, সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও দালাল সাদেকুর রহমান একটি ভ্রান্ত অভিযোগ দিয়ে চিংদামো, ইয়াংশি, লাচিং অং, মোমবাচিং নেশাই মং, লাচিং মং এবং মং চো’র বসতভিটা, গাছপালা, পুকুর-মাছের ক্ষতিপুরন বাবদ ৯১ লক্ষ সাতষট্রি হাজার পাশ’ একাত্তর টাকা উত্তোলন আটকে দিয়েছে।

পাড়ার বাসিন্দা ইয়াশিং, তরুনী চিয়েন হেপী বলেন, বন্দরের জন্য নির্মিত ধানখালী’তে বাঙালী অধ্যুষিত গুচ্ছগ্রামে পাড়াবাসীকে পূর্নবাস করতে চাইছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি, রীতি-নীতির সম্পূর্ন বিপরীত। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্বাধীনতা হারাবো।

একটি প্রভাবশালী মহল এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা করছে এমন দাবী করে পাড়া প্রধান চিংদামো বলেন, সর্বশেষ ৮ জুন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পিডি ক্যাপ্টেন এম নুরুজ্জামান তাদের ডেকে এক সপ্তাহের ভেতর গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারেরর গুরুত্বপূর্ন উন্নয়নে অংশীদার হতে আমরাও আগ্রহী। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানসহ রাখাইন এলাকায় পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথেইন প্রমিলা বলেন, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ কাজে সরকার বা রাষ্ট্রের সম্মান বাড়বে না। সরকার এটিকে ‘ন্যাশনাল হ্যরিটেজ’ হিসাবেও সংরক্ষণ করতে পারতো। তিনি আরো বলেন, আদিবাসী অধ্যুষিত কোনো জায়গা অধিগ্রহনের পূর্বে তাদের মতামত নিতে হবে। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের ১০নং অনুচ্ছেদে এমন নির্দেশনা থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করছে।

পায়রা বন্দরের ডিআইএস প্রকল্পের পরিচালক ক্যাপ্টেন নুরুজ্জামান বন্দর সচিবের সাথে যোগাযোগে করে এ বিষয়ে জানার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিষয়টি সমাধানে ক্ষতিগ্রস্থ ছয়টি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সোমবার জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি. এম. সরফরাজ বলেন, ১৫ জুলাই আপিল শুনানী রয়েছে। সেখানে এ বিষয়টির সুরাহা করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password