আগামীকাল ভোরে স্বপ্নের ফাইনালে মাঠে নামবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা

আগামীকাল ভোরে স্বপ্নের ফাইনালে মাঠে নামবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
MostPlay

কোপা আমেরিকার স্বপ্নের ফাইনালের জন্য প্রস্তত ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়াম। কোপা আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আগামীকাল ভোর ছয়টায় ব্রাজিলের মারকানা স্টেডিয়ামে মুখমুখি হবে দুই দল। বিশ্বকাপ না হলেও এ দ্বৈরথ যেন উত্তাপ ছড়াচ্ছে তার চেয়েও বেশি কারণ এই লড়াইটা যেন আবেগের, ভালবাসার, সম্মানের এবং মেসির সাথে নেইমারের। দুহাত ভরে দুজনেই দিয়েছেন দুজনার ক্লাবকে। তবে দেশের হয়ে দুজনের পরিসংখ্যান সামনে আসলেই নেইমারের কাছে নিষ্প্রভ মেসি।

এই ফাইনালটা মেসি ও আর্জেন্টিনার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ট্রফি কেসে নতুন কোন ট্রফি সংযোজন হয়নি গত ২৮ বছর। সবশেষ ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকার ট্রফি জিতেছিল। অপরদিকে মেসির জন্য আকাশি নিল জার্সি যেন এক হতাশার নাম। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এখনও কোন ট্রফি জেতা হয়নি এই ফূটবল জাদুকরের। ২০০৫ সালে আর্জেণ্টিনার জার্সিতে অভিষেকের পর তিনবার কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলেছেন লিওনেল মেসি। কিন্ত একবারও ট্রফি জয়ের স্বাদ পাননি তিনি। ২০০৭ সালে প্রথম আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্রাজিলের। সেই ফাইনালে ৩-০ গোলের বড় ব্যাবধানে হেরে গিয়ে শিরোপা জেতা হয়নি তার। এরপরের দুইবার চিলির সাথে হেরে শিরোপ বঞ্চিত হয়েছেন মেসি ও আর্জেন্টিনা।

৫ বছর পর আবারও কোপার ফাইনালে মেসি এবং আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ব্রাজিল। ব্রাজিলও দাপটের সাথে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আর মারাকানায় ব্রাজিলকে হারানো যে কতটা কঠিন তাতো সবারই জানা। এছাড়া ১৯৭৫ সালের পর কোপা আমেরিকার কোন ম্যাচ নিজেদের মাটিতে হারেনি ব্রাজিল। ব্রাজিলকে হারিয়ে যদি আর্জেন্টিনা কোপার শিরোপা জিততে পারে আহলে ভেঙে যাবে অনেক রেকর্ড, তবে প্রশ্ন হলো প্রত্যাশার এত বড় চাপ নিয়ে ব্রাজিলকে হারাতে পারবে তো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা? তবে শিরোপা না জিতলে মেসির শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে না, তা মানতে রাজি নন আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। তার মতে, মেসি এরই মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। তাই আর নতুন করে কিছু প্রমাণের বাকি নেই। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনি বলেছেন, ‘মেসি জিতুক বা না জিতুক, ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় সে-ই থাকবে। এটা প্রমাণ করতে তার শিরোপা জিততে হবে না। অবশ্যই আমরা শিরোপা জেতার জন্য মরিয়া। কারণ আমরা ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে সম্ভাব্য সব করে যাচ্ছি। কেউ চেষ্টার কমতি রাখছে না’।

মারাকানাকে ব্রাজিলের দূর্গ বলা হলেও এখানে মন খারাপের স্মৃতি রয়েছে সেলেসাওদের। বিশ্ব ফুটবলের আইকোনিক স্টেডিয়ামের একটি ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়াম। চিনের দুঃখ বলা হয় হোয়াং হু নদীকে আর ব্রাজিলের জন্য সেটা হলো মারাকানা। ১৯৫০ সালে বিশ্বস্কাপে নিজেদের মাঠে ফেভারিটদের মতো আসর শুরু করে ব্রাজিল। পুরো টুর্নামেণ্টে দাপটের সাথে খেলেই ফাইনাল রাউন্ডে নাম লেখায় ব্রাজিল। উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে সুইডেনকে ৭-১ এবং স্পেন ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সেলেসাওরা। শেষ ম্যাচে মারাকানাতে উরুগুয়ের বিপক্ষে ড্র করলেই নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে পারতো ব্রাজিল। কিন্ত সেই ম্যাচে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে। তবে সেইবারই শেষ।

এরপর মারাকানয় ব্রাজিল আর কোন ম্যাচ হারেনি। এছাড়া কোপা আমেরিকায় দুই আসর ধরেই অপরাজিত ব্রাজিল। ২০১৯ সালের আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবারও কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। তবে এটিকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন ব্রাজিল কোচ তিতে। তার মতে, অতীত সবসময় অতীতই। তাই সামনের দিকেই তাকাচ্ছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিতে বলেন, ‘অতীত অতীতই। অতীতের দিকে তাকিয়ে সামনের নির্দেশনা মেলে না। কোপা আমেরিকার গত দুই আসরে (চলতি আসর সহ) আমরা অপরাজিত; আমাদের পরিসংখ্যান তুলনামূলকভাবে ভালো, কিন্তু এগুলোকে খুব বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখি না আমি’।

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমরা একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাজটা গণমাধ্যম ও সমর্থকদের চেয়ে ভিন্ন। এটা প্রস্তুতি নেওয়া, অনুশীলন করা এবং মনোযোগ ধরে রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আমরা আমাদের মূল কাজগুলোর দিকে মনোনিবেশ করছি’।

কাল মাঠে নামার আগে খাতা কলমের হিসেবে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে ব্রাজিল। তবে ফাইনাল ম্যাচে যারা চাপ সামাল দ্দিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারবে তারাই শিরোপা উল্লাস করবে বলে বলছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password