কর্ণফুলীতে মাছ ধরা ট্রলার ডুবি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উজানে রহস্যজনকভাবে ডুবে গেছে একটি মাছ ধরা ট্রলার। সাগরে কোনো আবহাওয়ার সংকেত ছিল না; উত্তাল ছিল না কর্ণফুলী নদীও। আশপাশের কোনো জাহাজের সাথে ধাক্কাও লাগেনি। নদীতে নোঙর থাকা অবস্থায়ই মঙ্গলবার মাঝরাতে ডুবে গেছে ‘এফবি ক্রিস্টাল-৮’ নামের এই জাহাজটি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ‘এফভি ক্রিস্টাল-৮’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে।
তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মঙ্গলবার (৮ জুন) দিবাগত মধ্যরাতে নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় মাছ ধরার একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সকালে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। ওই এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে পরবর্তী কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন জোয়ারের সময়। তাই ট্রলারটি দেখা যাচ্ছে না।
ভাটার সময় সেটি যদি দেখা যায়, তবে কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ডুবি কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা শাহ আমানত সেতু এলাকায় এই ঘটনা ঘটে; যেখানে আশপাশে কোনো জাহাজ ছিল না। মাঝরাতে সাড়ে তিনটার দিকে জাহাজ ডুবে গেলেও জাহাজে থাকা সব নাবিককে নিরাপদে উপকূলে পৌঁছেছেন। অভিযোগ উঠেছে, ‘এফভি ক্রিস্টাল-৮’ জাহাজটি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের মালিকানাধীন ক্রিস্টাল গ্রুপের। ক্রিস্টাল গ্রুপ ইতোমধ্যে বিশাল অঙ্কের ঋণখেলাপি হয়েছে। আর গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে কানাডায় অবস্থান নিয়েছেন মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম।
ধারনা করা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ পেতেই কৌশলে জাহাজ ডুবানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে ক্রিস্টাল গ্রুপের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমভি প্রিন্স অব সীমান্ত-১ জাহাজের নাবিক শামীম মিয়া জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে জাহাজটি কাত হয়ে যেতে দেখে তারা টর্চ লাইট ফেলে সতর্ক করেন। কোনো সাড়া শব্দ পাননি। একপর্যায়ে জাহাজটি ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকে। কোনো জাহাজের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়নি বলে তিনি জানান। সদরঘাট নৌ পুলিশের ওসি এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, রাতে মাছ ধরার ট্রলারটি ডুবে গেছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
মোট কতজন ক্রু ছিল তা এখনো জানা যায়নি। জাহাজটি পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখানে জাহাজটি ডুবেছে তা বন্দর জলসীমার আওতায় পড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, জাহাজটি যেখানে ডুবেছে সেখানে বয়া দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। জাহাজটি যেখানে ডুবেছে সেখানে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করে না। ফলে জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
অভিযোগ আছে, ‘এফভি ক্রিস্টাল-৮’ জাহাজটি থাইল্যান্ড থেকে কেনা হয়েছিল স্ক্র্যাপ বা পুরণো জাহাজ হিসেবে। অর্থপাচারের জন্য সেটি নতুন হিসেবে কেনা দেখানো হয়। দেশে আমদানির পর সেটি মেরামত করলেও বেশিদিন চলেনি। এই অবস্থার মধ্যেই ফারমার্স ব্যাংকের ঋণখেলাপি হন মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম। এরপর থেকেই জাহাজটি অচল অবস্থায় কর্ণফুলী নদীতে পড়েছিল।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন