কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগ এনে কোদাল দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে ব্যাপক নির্যাতন করেছে ছৈয়দ আহমদ (১৫) নামের এক কিশোরকে। স্থানীয় জালাল আহমদ নামের এক ব্যক্তি নির্যাতনের পর ছবি-ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। ভিকটিম ছৈয়দ আহমদ উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়া এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় রাতভর নির্যাতনের পর আজ শনিবার সকালে মাথা ন্যাড়া করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযুক্ত জালাল আহমদসহ ৪ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদের বোন জোবাইদা বেগম।
জোবাইদা বেগম জানান, ‘স্থানীয় সামশুল আলমের ছেলে জালাল আহমদ বিনা অপরাধে আমার ভাই সৈয়দ আহমদকে সোনারপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে গরু চোরের অভিযোগ এনে ব্যাপক নির্যাতন করে। সারারাত বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। পরে কোদাল দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নামে মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনায় আমার ভাই জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সকালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ রফিক ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।’
জোবাইদা বেগম আরও বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার আমার ভাই এখন গুরুতর অসুস্থ। তাকে উখিয়া স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসায় রাখা হয়েছে। তার নাক এবং মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কারণে আমি নিজে বাদি হয়ে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে অভিযুক্ত জালাল আহমদ সহ ৪ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়াও অভিযুক্ত জালাল আহমদ মানবপাচারসহ বহু মামলার আসামী। বর্তমানে সাগরপথে মানবপাচার বন্ধ থাকায় নতুন করে ইয়াবাকারবারে জড়িত হয়ে পড়ে জালাল আহমদ। তার অপকর্মের খবর পুলিশকে বলে দিয়েছে সন্দেহে আমার ভাইকে গরু চোরের অপবাধ দিয়ে নির্যাতন করেছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ রফিক সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদ একজন ক্ষদ্র দোকানদার। তাকে স্থানীয় জালাল আহমদ গরু চুরির অভিযোগে বাজার থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে রাখে। খবর পেয়ে আমি নিজেই গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পুলিশকে তাৎক্ষণিক মৌখিক অবহিত করেছি।
তিনি আরও জানান, যে গরুটি চুরির অভিযোগ করা হয় সে গরুটি অভিযুক্তদের বাড়িতেই ছিল। তবু অপরাধী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে মারধর না করতে অনুরোধ করা হয়। এরপরও তা মানেনি। জালাল উদ্দিন সেখানে গিয়ে উল্টো আমার সাথে বিতর্ক করে বসে। তার সঙ্গে যোগ দেয় আরো কয়েকজন। বাকবিন্ডার পর বাড়িতে চলে এসেছি। শনিবার সকালে খবর পান, কোদাল দিয়ে ছৈয়দের মাথা মোড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাতভর মারধরসহ অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এমন একটি ভিডিও হাতে পেয়েছি আমি।’
মুঠোফোনে অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এলাকায় যাতে আর কোন সময় গরু চুরির মতো ঘটনা না ঘটে, পুরো এলাকাবাসীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে। তাতে অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই।’জানতে চাইলে উখিয়া থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ মন্জুর মোরশেদ জানান, ‘আমি সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছি। অভিযোগটি আমার কাছে এখনো আসেনি। এ রকম অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন