কে হাসবে শেষ হাসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় না ইসি

কে হাসবে শেষ হাসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় না ইসি

কে পাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) দায়িত্ব তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলছে নানা রকম  টানাপোড়েন। দায়িত্বটি ইসির কাছেই থাকছে নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচ্ছে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ইসি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সুশীল সমাজ, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলছে আলোচনা।

বেশ কিছু দিন ধরেই এই বিষয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। তবে সুশীল সমাজ মনে করছে এনআইডির দায়িত্ব যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে স্থানান্তর করা হয় তাহলে সাংবিধানিক সংকট ও ইসির স্বাধীনতার কফিনে সরকারের শেষ পেরেক হিসেবে যাবে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার চেয়ে ইসির হাতেই থাকা উচিত। না হলে কিছু অসুবিধা হবে।

সিইসি নূরুল হুদা আরও বলেন, এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের বিষয়ে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ হয়নি। স্থানান্তরের বিষয় এখন পর্যন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, আলোচনার পর্যায়ে আছে। চিঠি দিলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর করা যায় না। এটি জটিল কাজ।

তিনি আরও বলেন, এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছেই থাকা উচিত। কারণ ইসি এটি তৈরি করেছে ভোটার তালিকা তৈরির ভিত্তিতে। সরকারের যে উৎকণ্ঠা বা পরামর্শ সেটা হলো কোনো দেশে নির্বাচন কমিশন এনআইডি কার্ড করে না। এটা ঠিকই, কোনো দেশে এটা নির্বাচন কমিশন করে না।

ইসি এনআইডির নিয়ন্ত্রণের আশা না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ-সংক্রান্ত সেবার মান বাড়িয়ে নাগরিকের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এরমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বুধবার (১৯ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এনআইডির কার্যক্রম ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার বিষয়টি উঠে এসেছে।

এরআগে মঙ্গলবার (১৮ মে) এনআইডির কার্যক্রম হস্তান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন্স- এ সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত ইসির কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে জানান, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম যেভাবে চলমান রয়েছে তা অব্যাহত রেখে দ্রুত কিভাবে সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া সহজ হবে না বলে মনে করে ইসি। দায়িত্ব হস্তান্তরে সাংবিধানিক সংকটের বাইরেও নৈতিকতার বিষয় রয়েছে বলে মনে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সেবা থেকে ইসি প্রায় ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রমের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভার পর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে। জনগণের ভোগান্তি কমাতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তরের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র আর ভোটার আইডি কার্ড এক বিষয় নয়। পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার কাজ করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। এটি নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কা অমূলক। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password