অনেকদূর যেতে চাই : তৃতীয় লিঙ্গের কাউন্সিলর দিথী

অনেকদূর যেতে চাই : তৃতীয় লিঙ্গের কাউন্সিলর দিথী

সমাজে আমাদের আলাদা নজরে দেখা হয়। আমরাও মানুষ, আমাদেরও আবেগ অনুভূতি আছে। সুযোগ পেলে আমরাও মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। অনেক আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। জনগণ আমাকে আশাহত করেনি। আমি তাদের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।'

জনসেবার এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলর তৃতীয় লিঙ্গের দিথী খাতুন। তিনি বলেন, একলা পথচলা শুরু করি। চলতে চলতে এখন এগিয়ে গেছি কিছুদূর। যেতে চাই আরও অনেক দূর।

দিথী খাতুন এবারের সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২১৭৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। দিথীর পৈত্রিক নিবাস ছিলো যশোর সিটি কলেজ এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুল হামিদ মিয়া। তাঁরা ৩ ভাই ও ১ বোন। ভাই ৩ জনের কোনো সমস্যা নেই। কেবলমাত্র তাঁর পরিবারে তিনিই বিশেষ সম্প্রদায়ের।

বড় হওয়ার পরে পরিবার ছেড়ে চলে আসেন ও মিশে যান তাঁর গোত্রীয় অন্যদের সাথে। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি তৃতীয় লিঙ্গের এক গুরুমার সাথে দিথী খাতুন কলারোয়া উপজেলায় চলে আসেন এবং কলারোয়া উপজেলায় স্থায়ীভাবে সববাস শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কলারোয়া পৌর সদরের মির্জাপুরে (৮নং ওয়ার্ড) জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুন। ১৯৯৬ সালেই তিনি কলারোযা পৌরসভার ৮নং ওযার্ডের ভোটার হন।

এ সময় তিনি নিজ গোত্রীয় মানুষসহ এলকার মানুঁষের সাথে সাথে মিলে চলতে থাকেন। সেই থেকেই সেবামূলক কাজে ব্যাস্ত থাকেন দিথী খাতুন। নিজের সামর্থের পুরোটাই তিনি নিবেদন করেন এলাকাবাসীর জন্য। আর এজন্যই এলাকার মানুষের কাছে তিনি ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হযে ওঠেন।

তিনি বলেন, অনেকে চায় না আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সমাজের মূল ধারায় ফিরুক। তার উপর জনপ্রতিনিধির মতো দায়িত্বে আসতে কম ঝুঁকি নিতে হয়নি। গত নির্বাচনে আমাকে ষড়যন্ত্র করে সামান্য ভোটে হারানো হয়েছিল। এবারো তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করা হয়েছে। অপমান অপদস্ত করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাঠে থাকতে হয়েছে। নির্বাচনের দিনও স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা আমার বিপক্ষ প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে বিজয়ী করার ষড়যন্ত্র করেন। তবে জনগণ এবার বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করেছে। স্থানীয় প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পৌরসভা নির্বাচনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের দিথী খাতুনকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ভিন্ন মাত্রার উৎসাহ উদ্দীপনা ও কৌতূহল তৈরি হয়। তাকে নিয়ে মানুষের ছিল ভীষণ আগ্রহ। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র ১১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। পরাজয় বরণ করেও দমেননি। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘ ৫ বছর জনগণের পাশে থেকেছেন।

দিথীর বিজয়ে খুশি তার সম্প্রদায়সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের প্রত্যাশা এলাকার মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সব সময় ভূমিকা রাখবেন। তাকে সাথে নিয়ে তারা একসাথে এলাকার উন্নয়ন করতে চান।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, অনেক আশা নিয়ে এবার তাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছে এলাকার মানুষ। তিনি উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা রক্ষা করতে পারলে আগামীতে আবারও জনগণ তাকে নির্বাচিত করবে।

স্থানীয় শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূলধারার ফিরে আসার ক্ষেত্রে দিথী উজ্জ্বল উদাহরণ। সবার উচিত তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসলে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে। তাদের এই সমাজের বাইরের কেউ ভাবার সুযোগ নেই। সকলের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।

এর আগে ২০১৯ সালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী ছাদিয়া আক্তার পিংকি খাতুন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password