রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনদিনে ২ খুন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনদিনে ২ খুন

নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্রমশ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকিতে পরিণত হচ্ছে।

কক্সবাজারের উপকূলীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ইয়াবা, মানব পাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। চলছে অস্ত্রের মহড়াও। বাড়ছে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধও।

টেকনাফের ক্যাম্পে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দুটি অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ করে হত্যা, শিশুদের ঝগড়ার জেরের মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ দুটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এ দুই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক অথবা গ্রেফতার হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ৮টার দিকে  টেকনাফের জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুদের ঝগড়ার জেরধরে মামা-ভাগিনার লাঠির আঘাতে হাসান আহমেদ নামের এক রোহিঙ্গা পিতা নিহত হয়েছেন। তিনি ২৭নং জাদিমোরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বি-৬ ব্লকের ঠান্ডা মিয়ার ছেলে।

এর আগে বিকেলে, ২৭নং জাদিমোরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বি-৬ ব্লকের হাসান আহমেদের বাড়ির আঙ্গিনায় তার (হাসানের) ও প্রতিবেশী ইলিয়াছের শিশুরা খেলা করছিল। খেলার মাঝে দু’পরিবারের শিশুদের মাঝে ঝগড়া হলে বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গারা শিশুদের থামিয়ে দিয়ে যার যার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। মাগরিবের নামাজের পর হাসান তার ছেলেদের মারধর করার বিচার চেয়ে একই ক্যাম্পের ইলিয়াস নামের রোহিঙ্গার ঘরে সালিশ দিতে যায়। তখন ইলিয়াস ও তার ভাই সালিশ দিতে আসা হাসানের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতিতে জড়ায়। তখনও উপস্থিত রোহিঙ্গারা তাদের থামিয়ে পৃথক করে দেয়।

ঘটনার পর রাত ৮টার দিকে হাসান আহমদ রাস্তা দিয়ে হেটে যাবার সময় ইলিয়াস এবং তার ভাই নুর হোসেন লাঠি দিয়ে হাসানের মাথায় আঘাত করলে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে হাসান। তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী ক্যাম্প হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয় সেখানে রাত ১২টারদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোহিঙ্গা হাসান মারা যান।

সর্বশেষ শুক্রবার (৫ মার্চ) টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় থেকে নিখোঁজের তিন দিন পর শাহিনা নুর (৮) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোরীকে নয়াপাড়া নিবন্ধিত মৌচনি সি ব্লকের ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকা থেকে হাত কাটা লাশ উদ্ধার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা।  শাহিনা নুর এই ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা মো. জোবাইরের মেয়ে।

এরআগে গত ১ মার্চ ক্যাম্প থেকে দিনের বেলার ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শাহিনুর নুর। পরে তাকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বজনেরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় রোহিঙ্গাদের সহতায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা। এসময় তার চেহেরা বিকৃত ছিল। নির্মমভাবে কিশোরীকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি তার বাম হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। লাশের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়ীত্বে থাকা ১৬ এপিবিএন পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি মো. তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, এই নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও অপরাধীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password