বিলুপ্তির মুখে চীনের সংখ্যালঘুদের ২৫ ভাষা

বিলুপ্তির মুখে চীনের সংখ্যালঘুদের ২৫ ভাষা

চীনের অনেক আঞ্চলিক ভাষা এখন বিলুপ্তির মুখে- সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আটলাস অব দ্য ডেঞ্জার এর উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইট ওয়ার্ডফাইন্ডারের সমীক্ষা অনুসারে, ২৫ টি ভাষা এখন বিপন্ন।

ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার তালিকায় চীনের অবস্থান এখন সপ্তম। এই তালিকায় আরো আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮২টি, ব্রাজিলের ৪৫টি, অস্ট্রেলিয়ার ৪২টি, ভারতের ৪১টি, ইন্দোনেশিয়ার ৩২টি এবং কানাডার ৩০টি ভাষা। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, বিশ্বে এখন ৬ থেকে ৭ হাজার ভাষা আছে। ১০০ বছর আগে যার সংখ্যা ১০ হাজার ছিল বলে মনে করা হতো।  

ওয়ার্ডফাইন্ডারের সম্পাদক মাইকেল কোয়ান বলেছেন, ভাষাগুলো উচ্চারণ এবং ব্যাকরণের চেয়ে  বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার নিজের রুপের জন্য। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের পরিচয় দেয় ভাষা। ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যালঘুদের ভাষা হারিয়ে যাওয়া সত্যিই একটি দুঃখজনক ঘটনা।  

গত মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, ২৮ শতাংশ ভাষা বিপন্ন যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ১৩.৫ শতাংশ, ব্রাজিল ৭.৪ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৬.৯ শতাংশ। অন্য সাতটি দেশে বিপন্ন ভাষার সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পাঁচ বছরের বা তার বেশি বয়সের ২৯ কোটির বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে কেবল ইংরেজিতে কথা বলে, কেবল ৪৫ জন সমালোচক চিনুক জারগন ব্যবহার করে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিমে পিডজিন বাণিজ্য ভাষা হিসাবে উদ্ভূত একটি আদিবাসী ভাষা।

চীনের একটি ভাষা, যা ফুজু কিরগিজ নামে পরিচিত, তিন শতাব্দী আগে মধ্য সাইবেরিয়ায় তা ফিরে পাওয়া যায়। বর্তমানে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হাইলংজিয়াং-এর ফুজু কাউন্টিতে ওই ভাষার আনুমানিক ১০ জন মানুষ জীবিত আছেন।  চীনের মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতিগত সংখ্যালঘু ভাষা গবেষক লি জিনফাং বিশ্বাস করেন, দেশটির নগরায়ন এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি সংখ্যালঘুদের ভাষা গিলে খাচ্ছে।  চীনের ১.৪ বিলিয়ন মানুষ ১২০টিরও বেশি ভাষায় কথা বলে। সংখ্যাগরিষ্ঠ শুধু মান্দারিন ও সরকারি চীনা ভাষা।

লি বলেন, চীনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ মনে করে নিজেদের ভাষার চেয়ে মান্দারিন শেখা বেশি জরুরি। কারণ এটা না শিখলে চাকরি পাওয়া সহজ নয়।  এছাড়া অনেক মানুষ সমাজে ভালোভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে মান্দারিন শেখার জন্য নিজস্ব ভাষা ত্যাগ করেন। লি বলেন, এই প্রবণতা ছোট ভাষা গোষ্ঠীর জন্য উদ্বেগের বিষয়। কিছু ভাষা আছে যেগুলো শুধু বয়স্করাই বলতে পারেন। তার মানে তারা মারা গেলে ওই ভাষাও মারা যাবে।  

ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (চীনের আইনসভা) কয়েকজন প্রতিনিধি জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষার চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন।  তবে ২০১৫ সালে চীন একটি ভাষা সম্পদ সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। আজ পর্যন্ত এটি ৩০টি বই সংকলন করেছে এবং ৮১টি জাতিগত ভাষা এবং হান চীনা ভাষার ৫৩টি উপভাষার অডিও এবং ভিডিও ডাটাবেস তৈরি করেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password