ক্রিস্টোফার (ক্রিস) জেমস গ্রেইসাসের স্বপ্ন বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবে। কিন্তু পুলিশ অফিসার হওয়া তো দূরের পথ, তার বড় হওয়ার পথই আটকে দেয় দুঃস্বপ্নের লিউকেমিয়া। দুরারোগ্য এ ব্যাধি সাত বছরের ক্রিসকে দাঁড় করিয়ে দেয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাহলে কি তার পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে?
ক্রিসের এ স্বপ্নের কথা পৌঁছে যায় পুলিশের কাছে। তার ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে আসে তারা। ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল এক দিনের জন্য পুলিশ অফিসারের চেয়ারে বসানো হয় ক্রিসকে। স্বপ্নপূরণ হয় তার।
এভাবে একটি শিশুর ইচ্ছাপূরণের ধারণাটি পছন্দ হয় কিছু মানুষের। গঠিত হয় অলাভজনক সংস্থা মেক এ উইশ ইন্টারন্যাশনাল। রচিত হয় হাজারো শিশুর ইচ্ছাপূরণের ভিত্তি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্সে গড়ে ওঠা সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে ক্রিসের মতো হাজারো শিশুর স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ শিশুদের ইচ্ছাপূরণে পালন করছে ওয়ার্ল্ড উইশ ডে। দিবসটি পালনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ক্রিসের ইচ্ছাপূরণের দিনটিকে।
২০১০ সাল ছিল ক্রিসের ইচ্ছাপূরণের ৩০তম বার্ষিকী। সেই বছর থেকে পালিত হচ্ছে উইশ ডে। বিশ্বের ৪৮টি দেশে এই দিবসে ইচ্ছাপূরণ করা হয় আড়াই থেকে ১৭ বছর বয়সীদের।
কোনো শিশুর ইচ্ছাপূরণ করতে চাইলে প্রথমেই মেক-এ-উইশের অনলাইন যাচাই ফরম পূরণ করতে হয়। শিশুর বাবা-মা অথবা আইনি অভিভাবক কিংবা চিকিৎসক, যিনি শিশুটির চিকিৎসা করছেন, তিনি এই অনলাইন যাচাই ফরম পূরণ করতে পারবেন। এরপর ফরমে উল্লেখ করা তথ্য যাচাই করে পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি।
বিশ্বজুড়ে দাতাদের সহায়তায় চলে মেক-এ-উইশ ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম। প্রায় ৪৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত আছেন সংস্থাটির সঙ্গে। এরই মধ্যে অন্তত ৫ লাখ শিশুর ইচ্ছাপূরণ করা হয়েছে।
আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও কার্যক্রম চলছে মেক-এ-উইশ ইন্টারন্যাশনালের। তবে বাংলাদেশে এখনো সূচনা হয়নি এ দিবসের কার্যক্রম। তাই বলে দিবসটি পালন করবেন না? চাইলে মেক-এ-উইশের ওয়েবসাইটে গিয়ে হাজারো শিশুর ইচ্ছাপূরণের দারুণ সব গল্প পড়তে পারেন। কোনো সুবিধাবঞ্চিত শিশুর ইচ্ছাপূরণের মধ্য দিয়ে পালন করতে পারেন দিবসটি।
ফিরে যাওয়া যাক ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিলে। সেদিন ক্রিসের ইচ্ছাপূরণের আয়োজনে ঘাটতি ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার পুলিশের। তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশে ব্যাজ। মাথায় চাপানো হয় হ্যাট। এমনকি জননিরাপত্তা বিভাগের (ডিপিএস) সাম্মানিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ক্রিসকে সেদিন শপথও পড়ানো হয়। ক্রিসের মতো এমন সম্মান আর কেউ পায়নি। সে ছিল অ্যারিজোনার প্রথম ও শেষ সাম্মানিক ডিপিএস অফিসার। ক্রিসের জন্য পুলিশের ইউনিফর্মও তৈরি করা হয়েছিল, যা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু ইচ্ছাপূরণের মাত্র কয়েক দিনের মাথায় লিউকেমিয়ার সঙ্গে ক্রিসের লড়াই থেমে যায়। ৩ মে মারা যায় সে।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনার মধ্যেও সামান্যতম হলেও স্বস্তির বিষয় ছিল যে ক্রিস তার জীবনের শেষ কয়েকটা দিন বেঁচেছিল স্বপ্নপূরণের আনন্দ নিয়ে।
কোনো শিশু যখন গুরুতর অসুস্থতায় ভোগে, তখন তার স্বাভাবিক শৈশব হারিয়ে যায়, যা শারীরিক ও মানসিক-দুদিক থেকে ক্লান্তিকর। কোনো স্বপ্নপূরণ তাকে অসুস্থতার জগৎ থেকে একটু বাইরে চোখ মেলার সুযোগ করে দেয়। তাকে ফিরিয়ে দেয় শৈশবের অনুভূতি, পরিবারকে দেয় স্বাভাবিকতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ইচ্ছাপূরণ শিশুর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইচ্ছাপূরণ শিশুর মধ্যে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে তার মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। তার আত্মশক্তি উন্নত করে। দ্বিতীয়ত, ইচ্ছাপূরণ শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। এতে শিশুর ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে।’
আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও কার্যক্রম চলছে মেক-এ-উইশ ইন্টারন্যাশনালের। তবে বাংলাদেশে এখনো সূচনা হয়নি এ দিবসের কার্যক্রম। তাই বলে দিবসটি পালন করবেন না? চাইলে মেক-এ-উইশের ওয়েবসাইটে গিয়ে হাজারো শিশুর ইচ্ছাপূরণের দারুণ সব গল্প পড়তে পারেন। কোনো সুবিধাবঞ্চিত শিশুর ইচ্ছাপূরণের মধ্য দিয়ে পালন করতে পারেন দিবসটি। আপনার বাসার গৃহকর্মীর সন্তানকে খেলনা কিনে দিয়ে চমকে দিন। দেখবেন তার মুখের হাসি আপনাকে কতটা আনন্দ দেয়। নিজের সন্তানকেও উপহার দিতে পারেন।
দিনটিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইচ্ছাপূরণের মজার এক খেলায়ও মেতে উঠতে পারেন। একটি জার নিন। পরিবারের সদস্যদের সবাইকে বলুন তার ইচ্ছার কথা কাগজে লিখে ভাঁজ করে তাতে রাখতে। জারে সবার কাগজ রাখা শেষ? এরপর চট করে অন্যের অজান্তে জার থেকে কাগজ বের করে জেনে নিন তাদের ইচ্ছা সম্পর্কে। তারপর চেষ্টা করুন সেটা পূরণ করতে। দেখবেন অন্যের ইচ্ছাপূরণের আনন্দ আপনাকে কতটা আনন্দিত করে!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন