কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধের নাম নুরুল আলম (৭২)। কয়েকজন যুবক ওই বৃদ্ধকে খোলা মাঠে নগ্ন করে কিল-ঘুষি মারছেন, পড়নের লুঙ্গি, গেঞ্জি টেনে ছিড়ে ফেলছেন। সাথে সাথে অসভ্য গালিগালাজও করছেন। আর কয়েকজন যুবক তা মোবাইলে ক্যামরায় ভিডিও ধারণ করে করে হাসলেন।কেউ এগিয়ে আসেনি ওই বৃদ্ধকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে বয়োবৃদ্ধ নুরুল আলমকে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একজন আপলোড করার সাথে ভাইরাল হয়ে যায়। হাজার হাজার শেয়ার ও কমেন্টস পড়ে।
গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটির পুরো নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল যুবক। এ ঘটনার পর গত ৩১ এপ্রিল রাতে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদি হয়ে চকরিয়া থানা একটি এজাহার দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে- একই এলাকার মৃত মনির উল্লাহর ছেলে মো. বদিউল আলম (৫৫), আনছুর আলম (৩৫), শাহ আলম (৫২), শাহ আলমের স্ত্রী আরেজ খাতুন (৪৮), বদিউল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), আবদুল জাব্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৩২), জয়নাল আবেদিন (৩০) এবং মনজুর আলমের ছেলে মো.রুবেল (২৮)।
এজাহারে বাদি দাবি করেছেন, গত ২৪ মে আমার বয়োবৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম ঈদের বাজার করে ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে টমটম গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টমটম থেকে আমার বাবাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে পড়নে থাকা লুঙ্গি, গেঞ্জি ছিড়ে পেলে। পাশাপাশি মারধর ও অসভ্য গালিগালাজও করে। কয়েকজন যুবক এসব ঘটনার মোবাইলের ক্যামরাতে ধারণ করে। এসময় আমার বাবা বাঁচাও বাঁচাও বলে শোর-চিৎকার করতে থাকে। পরে ঘটনাটি শোনার পর আমার ছোট ভাই সিএনজি চালক সালাহউদ্দিন স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান।
মামলার বাদি আশরাফ হোসাইন এজাহারে আরো দাবি করেন, ঘটনার সময় আমার বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট ও পকেটে থাকা নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়। আশরাফ হোসাইন আরো বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে আমার বাবার উপর অমানবিক এই ঘটনাটি গঠিয়েছে ঘটনার অন্যতম সন্ত্রাসী আনছুর আলম। সে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে এমন অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বৃদ্ধ নুরুল আলমের সাথে। তিনি এই এলাকার বয়োবৃদ্ধ। সবাই ওনাকে খুব সম্মান করে। এলাকার কিছু চিহিৃত সন্ত্রাসী ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় এজাহার দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আনছুর আলমের মোবাইলে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগির ছেলে আশরাফ হোসাইন একটি এজাহার দিয়েছেন। খুব তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো.মতিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি ফেসুবকে দেখেছি। ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ঘটনাটি জানার পর চকরিয়া থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আশা করি যারা এমন অমানবিক কান্ড ঘটিয়েছেন দ্রুত সময়ে সেসব অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবেন।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন